অ্যালগরিদম কি (Algorithm meaning in bengali): আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো এলগরিদম কি বা কাকে বলে, এলগরিদম বলতে কি বুঝায়, এর বৈশিষ্ট্য এবং এর কাজ কী নিয়ে।
বর্তমান এই আধুনিক যুগে এসে আপনি হয়তো এলগরিদম এর নাম শুনেছেন। যদি আপনি নাম শুনেছেন কিন্ত algorithm সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষের তেমন ধারণা নেই বললে চলে।
আমরা প্রতিদিন নানা ধরনের কাজ করে থাকি। আর এই কাজ গুলোর করার জন্য আমাদের নিদিষ্ট কিছু স্টেপ অনুসারণ করতে হয়।
আপনি যখন কোনো কাজ করতে যান তখন সেটা শুরু করার জন্য সমস্যা হয় এবং সেই সমস্যাকে আমরা কাজের মাধ্যমে সমাধান করে থাকি। কাজের মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করার জন্য কিছু প্রক্রিয়া অনুসারণ করতে হয়।
উদাহরণ: মনে করুন মা বাড়ি নেই তাই আপনাকে লুডুস রান্না করতে হবে। এখন লুডুস রান্নার জন্য আপনাকে কিছু প্রক্রিয়া অনুসারণ করতে হবে।
লুডুস রান্নার জন্য আপনাকে কি কি করতে হবে –
- প্রথমে পানি গরম করতে হবে।
- গরম পানিতে লুডুস সেদ্ধ করতে হবে।
- এবার ডিম এবং প্রয়োজনীয় মসলা একসাথে রান্না করতে হবে।
- পরে লুডুস সেই রান্না করা ডিম ও মসলাতে দিয়ে কিছু সময় রান্না করতে হবে।
- এবার আপনি লুডুস খেতে পারবেন।
এবার algorithm হিসেবে লুডুস রান্নার উদাহরণটা বুঝে নিন। কারণ, লুডুস রান্নার জন্য নিদিষ্ট কিছু প্রক্রিয়া অনুসারণ করতে হয়েছে। এই প্রক্রিয়া যদি উল্টোপাল্টা হয়ে যায় তাহলে লুডুস রান্না করা হবে না।
এবার হয়তো আপনি algorithm সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পেয়েছেন যে algorithm আসলে কি। তাহলে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি algorithm কি (about algorithm in bangla) এই সম্পর্কে।
অ্যালগরিদম কি? (What is algorithm)
কম্পিউটার যে নির্দেশনা অনুসারে কাজ করে সেই নির্দেশনা তৈরি করার জন্য কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখা হয়। এই কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখার সময় বিভিন্ন রকমের স্টেপ থাকে, সেই স্টেপ অনুসারে কম্পিউটার কাজ করে।
আপনি যখন কম্পিউটারকে কোনো কাজ দিবেন তখন এটাও আপনাকে ভাবতে হবে কিভাবে কম্পিউটার আপনার দেওয়া কাজ গুলো করতে পারবে। আর এই কারণে আমরা computer algorithm ব্যবহার করি।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, অ্যালগরিদম (algorithm) হলো এমন কিছু বিশেষ নির্দেশনাবলীর স্টেপ যার মাধ্যমে বিশেষ কোনো সমস্যার সমাধান করা হয়।
অ্যালগরিদম এর সংজ্ঞা (Define algorithm)
Algorithm হলো এমন একটি প্রক্রিয়া বা ফর্মুলা সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। এখানে কিছু নিদিষ্ট নিয়ম থাকে, যেগুলোকে নির্দেশ বলে মনে করা হয়।
এই প্রত্যেকটি নিয়ম একটির পর একটির ক্রমাগত ভাবে লেখা হয়। আর প্রত্যেকটি নিয়ম কোনো না কোনো অপারেশন গুলো করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
এই নিয়ম গুলো সঠিক ভাবে মেনে এগিয়ে যাওয়ার ফলে শেষে সমাধান পাওয়া যায়। এক কথায় এই নিয়ম গুলোর মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করা যায়।
যদি আরো সহজ ভাবে বলি,
অ্যালগরিদম হলো কোনো সমস্যা (problem) এর সমাধান বের করার একটি স্টেপ বাই স্টেপ প্রক্রিয়া।
আশাকরি, অ্যালগরিদম মানে কি বা অ্যালগরিদম বলতে কি বুঝায় এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর পেয়ে গেছেন।
অ্যালগরিদম এর জনক কে?
অ্যালগরিদম এর জনক হলেন মুসা আল খাওয়ারিজমী।
অ্যালগরিদম এর কাজ কী?
আমরা জেনেছি কোনো সমস্যা সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট স্টেপ বাই স্টেপ প্রক্রিয়াকে অ্যালগরিদম বলে। অ্যালগরিদম মূলত ব্যবহার করা হয় কোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য।
একটা উদাহরণ দিয়ে বুঝাই –
মনে করেন আপনি চা তৈরি করবেন। তাহলে চা তৈরির অ্যালগরিদমটা কেমন হবে?
- প্রথমে একটি পাত্রে পানি নিতে হবে।
- পানি ফুটানোর জন্য পাত্রটা চুলার উপর রাখতে হবে।
- পানি গরম হয়৷ গেলে চা পাতা দিতে হবে।
- প্রয়োজন মতো চিনি এবং দুধ দিয়ে খাবার উপযোগী করতে হবে।
উপরে চা তৈরি করার জন্য স্টেপ গুলো বললাম সেটাই চা তৈরি করার অ্যালগরিদম।
এই একই প্রক্রিয়া অনুসারণ করে কম্পিউটার বিজ্ঞানের অনেক সমস্যা সমাধান করেছে algorithm. অ্যালগরিদম এর কাজ হলো কোনো সমস্যাকে সমাধান করা।
অ্যালগরিদম তৈরির নিয়ম
Algorithm তৈরি করার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। প্রথমে সমস্যা প্রোগ্রামের বিষয় নির্ধরণ করতে হয় এবং এই বিষয়ের একটি শিরোনাম দিতে হয়।
এরপর বিষয়টি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে সেটার সমাধান করার পথ বের করতে হয়। সমস্যা যদি বড় আকারে হয় তাহলে ছোট ছোট ধাপে সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে।
অ্যালগরিদমের প্রত্যেকটি ধাপ খুব সাবধানের সাথে নির্ধারণ করতে হবে। একটি ভালো অ্যালগরিদম এর ৪টি শর্ত থাকে। এই শর্ত গুলো মেনে অ্যালগরিদম তৈরি করতে হয়।
এই ৪টি শর্ত গুলো হলো –
- অ্যালগরিদম সহজবোধ্য হতে হবে।
- কোনো ধাপ জটিল / কঠিন হবে না এবং স্পষ্ট হতে হবে।
- সসীম সংখ্যক ধাপে সমস্যার সমাধান করতে হবে।
- একে ব্যাপক ভাবে প্রয়োগ করার সম্ভাবনা থাকতে হবে।
অ্যালগরিদম এর বৈশিষ্ট্য
আমরা আগেই জেনেছি algorithm হলো স্টেপ বাই স্টেপ প্রক্রিয়া। এবার জানবো “অ্যালগরিদম এর বৈশিষ্ট্য” গুলোর সম্পর্কে।
১. Input – প্রত্যেক algorithm মধ্যে O যা O থেকে অধিক সঠিক স্টেপ লাগে।
২. Output – যেভাবে অ্যালগরিদম এর ইনপুট স্টেপ হয়ে থাকে, সেই ভাবে এর আউটপুট স্টেপ হওয়া জরুরি। আর আউটপুটে সেটা আসা জরুরি যার জন্য অ্যালগরিদম লিখেছেন।
৩. Unambiguous – যখন কোনো algorithm লিখবেন তখন যেন স্পষ্ট ও সঠিক হওয়ার জরুরি। এর সাথে প্রত্যেক স্টেপ বা লাইনের কিছু মিনিং থাকা জরুরি।
৪. Finiteness – প্রতিটি অ্যালগরিদম কিছু সীমিত স্টেপ এর মাধ্যমে শেষ হয়। আর প্রতিটি স্টেপ সীমিত পরিমানে রিপিট হতে লাগে।
৫. Effectiveness – টাইম ও স্পেস এর মাধ্যমে কার্যকারিতার অনুমান করা সম্ভব। যদি অ্যালগরিদম কম টাইমে ও কম স্পেসের মধ্যে লেখা হয়েছে বা কম সময়ে এক্সিকিউট হয়েছে এবং কম স্পেসে রান হয় তাহলে তাকে effectiveness বলে।
ফ্লোচার্ট কি? (What is flowchart in bangla)
Algorithm কে চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হলো ফ্লোচার্ট (flowchart). ফ্লোচার্ট হলো কতগুলো জ্যামিতির আকারের ছবি যা থেকে বোঝা যায়, একটি প্রোগ্রামে কোন ধাপের পরে কোন ধাপ সম্পূর্ণ করতে হবে।
সহজ ভাবে বলতে গেলে, অ্যালগরিদম এর প্রত্যেকটি ধাপে চিত্রের মাধ্যমে বুঝানোকে ফ্লোচার্ট বলা হয়। কিছু ভিন্ন ভিন্ন জ্যামিকিক চিত্র ব্যবহার করে ফ্লোচার্ট তৈরি করা হয়।
ফ্লোচার্ট এর মাধ্যমে প্রোগ্রামের প্রকৃতি বোঝাতে সাহায্য করে। এই flowchart এর উপর নির্ভর করে প্রোগ্রাম (programme) লেখা হয়।
অ্যালগরিদম ও ফ্লোচার্ট এর মধ্যে পার্থক্য
১. কোনো সমস্যা সমাধান করার সুনির্দিষ্ট ধাপ গুলোকে অ্যালগরিদম বলে এবং অ্যালগরিদমের চিত্ররূপকে ফ্লোচার্ট বলে।
২. অ্যালগরিদম এর ভিত্তিতে ফ্লোচার্ট তৈরি করা হয় এবং ফ্লোচার্ট এর ভিত্তিতে প্রোগ্রাম রচনা করা হয়।
৩. অ্যালগরিদম বর্ণনামূলক এবং ফ্লোচার্ট চিত্রনির্ভর।
অ্যালগরিদম এর ব্যবহার / গুরুত্ব
এমনিতেই প্রোগ্রামিং এর ক্ষেত্রে অ্যালগরিদম প্রচুর পরিমানে ব্যবহার করা হয়। যে বিষয় গুলোতে অ্যালগরিদম ব্যবহার করা সেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো –
- Computer programming
- Flowchart
- Software Engineer
- Computer Scientist
- Mathematical problem solve
- Al, space research ইত্যাদি।
শেষ কথা
আজকের আলোচনার বিষয় অ্যালগরিদম কি (Algorithm meaning in bengali). আশাকরি আর্টিকেলটি আপনারা সহজে বুঝতে পারছেন।
তাই, অবশ্যই আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং কোনো বিষয়ে সমস্যা থাকলে নিচের কমেন্টে লিখে জানাবেন।