বায়োমেট্রিক্স কি? কত প্রকার এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়

আপনি কি জানেন বায়োমেট্রিক্স কি (What is biometric)? যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য। কারণ, আজকে এই আর্টিকেলে biometric সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

বায়োমেট্রিক্স হলো বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত প্রমাণীকরণ একটি পদ্ধতি যা জীববিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে এবং তথ্য আশ্বাসে ব্যবহার করা হয়।

বায়োমেট্রিক্স বলতে মানব সম্পর্কে পরিসংখ্যান বুঝায়। বায়োমেট্রিক্স সনাক্তকরণ কম্পিউটার বিজ্ঞানের প্রচুর ব্যবহৃত এক প্রকার সনাক্তকরণ প্রাথা।

কোনো ব্যাক্তির উপর নজরদারী চালাতে এটা ব্যবহার করা হয়। বায়োমেট্রিক সনাক্তকারী ব্যাক্তির কিছু শারীরিক বৈশিষ্ট্য গুলো দেখে সেই ব্যাক্তিকে সনাক্ত করে।

এই শারীরিক বৈশিষ্ট্য গুলো হলো – হাতের তালুর শিরা, হাতের আঙুলের ছাপ, হাতের তালুর ছাপ, ডিএনএ, মুখমণ্ডল, আইরিস বা চোখ, গন্ধ, হাটার ধরণ, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ, রেটিনা, হাতের জ্যামিতিক আকৃতি ছাড়া আরো অনেক কিছু।

তাহলে চলুন নিচের থেকে জেনে আসি biometric কি, কত প্রকার ও কি কি, কোথায় ব্যবহার করা হয়, এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলোর সম্পর্কে বিস্তারিত।

বায়োমেট্রিক্স কি? (What is biometric in bangla)

বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি যেখানে কোনো ব্যাক্তির গঠন ও আচারণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে তাকে অদ্বিতীয় ভাবে সনাক্ত করা হয়।

বায়োমেট্রিক্স হলো কোনো মানুষের শারীরিক আচারণগত বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ ও পরিসংখ্যানগত বিশ্লেষণ। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে সনাক্ত করা সম্ভব এবং তার বিভিন্ন অনুমতি দেওয়া সম্ভব।

এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে কম্পিউটার মানুষের আচারণগত বৈশিষ্ট্য এবং শারিরীক গঠন সনাক্ত করতে পারে। কম্পিউটার সনাক্ত করার পরে বিভিন্ন কাজ করার অনুমতি দিতে পারে।

এক কথায় বায়োমেট্রিক হলো মানুষের অপরিবর্তিত দৈহিক বা আচরণের বৈশিষ্ট্য গুলো ব্যবহার করে মানুষ চেনানর পদ্ধতি।

যেমন – হাত, মুখ, পা, চোখ, কান, দাঁত, কণ্ঠস্বর, স্বাক্ষর, আঙুল, চলাফেরা ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য গুলোর অন্তর্ভুক্ত। তবে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হাতের আঙুলের ছাপ, চোখ এবং মুখের আবয়বকে বিশ্লেষণ করা হয়।

সহজে ভাষায় বায়োমেট্রিক্স কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি প্রযুক্তি যার মাধ্যমে কম্পিউটার মানুষের শারীরিক ও আচারণগত বৈশিষ্ট্য গুলো সহজে চিনতে পারে বা সনাক্ত করতে পারে।

বায়োমেট্রিক্স এর কাজ কি?

বায়োমেট্রিক ডিভাইস কোনো ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত বৈশিষ্ট্য গুলোকে ডিজিটাল কোডে রূপান্তরিত করে এবং ঔ কোড গুলোকে কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে মিল করে।

what is biometric

যখন ব্যবহারকারীর ব্যাক্তিগর কোড গুলো কম্পিউটারে সংরক্ষিত কোডের সাথে মিলে যায় তখন সেই ব্যাক্তিকে সনাক্ত করতে পারে।

বায়োমেট্রিক শব্দের অর্থ কি?

বায়ো শব্দের অর্থ হলো প্রাণ, জীবন ইত্যাদি। আর মেট্রিক শব্দের অর্থ হলো প্যারামিটার যার দ্বারা কোনো কিছুর কাজের বৈশিষ্ট্য গুলো সবার থেকে আলদা করা সম্ভব।

তাহলে, বায়োমেট্রিক শব্দের অর্থ হলো – কোনো প্রাণী বা জীবকে তার বৈশিষ্ট্যের মাধ্যমে অন্যদের থেকে আলদা করা বা সনাক্ত করা।

বায়োমেট্রিক্স এর জনন কে | আঙ্গুলের ছাপ আবিষ্কার করেন কে

বাংলাদেশের আজিজুল হক এবং ইংল্যান্ডের স্যার হেমচন্দ্র বোস ১৮৮০ সাল থেকে গবেষণা শুরু করে ১৮৯২ সালে হাতের আঙ্গুলের ছাপ আবিষ্কার করেন।

সারা বিশ্বে যত গুলো লোক রয়েছে তাদের একজনের সাথে অন্য জনের হাতের আঙ্গুলের ছাপ কখনো মিলবে না। তাই এর মাধ্যমে সহজে মানুষকে সনাক্ত করা সম্ভব হয়।

বায়োমেট্রিক কত প্রকার | বায়োমেট্রিক্স এর প্রকারভেদ

দেহের গঠন ও আচারণ বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি ২ প্রকার। যথা-

  • দেহের গঠন বৈশিষ্ট্য পদ্ধতি
  • আচারণগত বৈশিষ্ট্য পদ্ধতি

দেহের গঠন বৈশিষ্ট্য পদ্ধতি গুলো হলো:

১. মুখ বা চেহারার বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করা।

২. ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর মাধ্যমে হাতের আঙুলের বিশ্লেষণ করা।

৩. চোখের মণির চারিপাশে বেষ্টিত রঙিন বিশ্লেষণ করা।

৪. হাত ও কক্জির শিরার প্যাটার্ন বিশ্লেষণ করা।

৫. হাতের গঠন ও আঙুলের দৈর্ঘ্যের মাপ বিশ্লেষণ করা।

আচারণগত বৈশিষ্ট্য পদ্ধতি গুলো হলো:

১. কণ্ঠস্বর বিশ্লেষণ করা।

২. কোনো পাসওয়ার্ড বা টাইপিং কী এন্ট্রি করা হয় বা বিশ্লেষণ করা হয়।

৩. হাতের লেখা গুলো বিশ্লেষণ করা।

বায়োমেট্রিক্স এর সুবিধা

  • বায়োমেট্রিক্স সব সময় মানুষের সাথে থাকে হারিয়ে বা ভুলে যাওয়া যায় না।
  • Spoof proof বায়োমেট্রিক্স জাল বা চুরি করা অনেক কঠিন।
  • বায়োমেট্রিক্স এক জন ব্যাক্তির কিছু আছে এর উত্তর প্রদান করে এবং পরিচয় যাচাই করতে সাহায্য করে।
  • অ-স্থান্তারযোগ্য আমাদের প্রত্যেকেরই বায়োমেট্রিক্সের একটি অন্যন্যা সেটে অ্যাক্সেস রয়েছে।
  • ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা সুবিধা জনক ও দ্রুত।

বায়োমেট্রিক্স এর অসুবিধা

  • বায়োমেট্রিক ডেটা এখন হ্যাক করা যেতে পারে।
  • নিরাপত্তার জন্য বায়োমেট্রিক্সে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করা প্রয়োজন।
  • বায়োমেট্রিক জনসংখ্যাগত পক্ষপাত কমানোর জন্য মেশিন লানিং এবং অ্যালগরিদম গুলো অনেক উন্নত হতে হবে।
  • মিথ্যা গ্রহণ ও মিথ্যা প্রত্যাখ্যান এখনও হতে পারে যা নির্বাচিত ব্যবহারকারীদের সিস্টেম অ্যাকেক্স করতে বাধা দেয়।
  • বায়োমেট্রিক ডিভাইস ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম ব্যবহারকারীদের জন্য গোপনীয়তা সীমিত করে।

বায়োমেট্রিক্স কোথায় ব্যবহৃত হয় | বায়োমেট্রিক্স এর প্রয়োগ ক্ষেত্র সমূহ

স্মার্টফোনে – বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই স্মার্টফোনে সিকিউরিটি এর জন্য বায়োমেট্রিক্স ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করি।

স্বাস্থ্যসেবা – স্বাস্থ্য বীমা প্রোগ্রামের জাতীয় পরিচয় পত্রের মতো সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়। যা সনাক্ত করণের জন্য হাতের আঙুলের ছাপ ব্যবহার করা হয়।

বিমানবন্দরের নিরাপত্তা – বিমানবন্দরে বায়োমেট্রিক্স ব্যবহার করা হয় যেমন আইরিস স্বীকৃতি। তাছাড়া, “ই-পাসপোর্ট” ব্যবহার করার জন্য বায়োমেট্রিক্স এর প্রয়োজন হয়।

আইন প্রোয়োগকারী – ফৌজদারি আইডি গুলোর জন্য সিস্টেমে ব্যবহার করা হয়। যেমন – ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা পাম প্রিন্ট প্রমাণীকরণ সিস্টেম।

আমেরিকার হোমল্যান্ড সিকিউরিটি  বিভাগ – এটা বর্ডার পেট্রোল শাখায় বহু সনাক্তকরণ, শংসাপত্র এবং যাচাইকরণ প্রক্রিয়ার জন্য ব্যবহার করা হয়।

সিম নিবন্ধন – বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয় পত্র দিয়ে সিম রেজিষ্ট্রেশন করার সময় আঙ্গুলের ছাপ বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট ব্যবহার করা হয়। 

বায়োমেট্রিক্স এর উপাদান

বায়োমেট্রিক্স হলো এমন একটি পদ্ধতি যেখানে একজন মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বা আচারণগত বৈশিষ্ট্যের উপর ভিত্তি করে ব্যাক্তিকে অদ্বিতীয় বলে সনাক্ত করে।

বায়োমেট্রিক্সে কম্পিউটার তার নিজের মধ্যে সংরক্ষণ করা ডেটা কোড গুলো ব্যাক্তির প্রদান করা কোড গুলোর সাথে তুলনায় মিলে গেলে ব্যাক্তি প্রবেশ অধিকার পায়।

বায়োমেট্রিক্স এর উপাদান গুলো হলো –

ফিঙ্গারপ্রিন্ট: মানুষের হাতের আঙুলের ছাপ ফিঙ্গারপ্রিন্ট রিডার যন্ত্রের সাহায্যে কম্পিউটার ডিজিটাল ডাটায় রূপান্তরিত হয়ে পৌঁছায়৷ কম্পিউটারে সংরক্ষিত ডাটার সাথে মিল থাকলে ব্যাক্তি সনাক্ত বা অ্যাকসেস পায়।

ডিএনএ টেস্ট: মানুষের দোহ থেকে ডিএনএ নিয়ে সেটা মানুষের ডিএনএ ফিঙ্গার তৈরি করা হয়। এখানে অনেক সময় চুলের মতো অঙ্গ ও ব্যবহার করা হয়।

সাক্ষর ভেরিফিকেশন: মানুষের সাক্ষর, লেখার ধরন বা গতি, কলমের চাপ ইত্যাদি পরিক্ষা করে ব্যাক্তিকে সনাক্ত করা হয়।

ভয়েস রিকগনিশন: ভয়েস রিকগনিশন পদ্ধতিতে ডেটাবেসে সংরক্ষণ করে রাখার পর সেই ভয়েস রিকগনিশন যদি ব্যবহারকারীর ভয়েসরর সাথে মিলে যায় তবে অ্যাকসেস পায়।

ফেস রিকগনিশন: কম্পিউটারের মাধ্যমে মানুষের মুখের আকৃতি সনাক্ত করা হয়। দুই চোখের দূরত্ব, নাকের দৈর্ঘ্য ও ব্যাস ইত্যাদির সাথে তুলনা করার মাধ্যমে ব্যাক্তি সনাক্ত করা হয়।

হ্যান্ড জিওমিট্রি: প্রত্যেক মানুষের হাত ভিন্ন হয়, তাই এই হাতের পদ্ধতি অনুসারণ করে কম্পিউটার মানুষকে সনাক্ত করতে পারে।

আইরিস: বর্তমানে বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে মানুষ সনাক্ত করার জন্য আইরিস হলো আদর্শ অঙ্গ। এক জন ব্যাক্তির আইরিস বা চোখের সাথে অন্য ব্যাক্তির চোখ সব সময় ভিন্ন হয়। তাই কম্পিউটারের সামনে স্থির হয়ে দাঁড়ালে সনাক্ত করতে পারবে।

কীস্ট্রোক ভেরিফিকেশন: ব্যাক্তির টাইপের গতি, টাইপের ধরণ এবং টাইপের ছন্দ ইত্যাদি বিশ্লেষণ করে সনাক্ত করা সম্ভব।

শেষ কথা

তাহলে আজকে আমরা জানলাম বায়োমেট্রিক্স কি (what is biometric), কত প্রকার, কোথায় ব্যবহৃত হয় এবং সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে।

আশাকরি বায়োমেট্রিক্স নিয়ে লেখাটি আপনাদের কাছে ভালো লাগছে। এই সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন বা পরামর্শ থাকে তাহলে কমেন্টে জানাবেন।

2 thoughts on “বায়োমেট্রিক্স কি? কত প্রকার এবং কোথায় ব্যবহৃত হয়”

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap