অ্যানিমেশন কি | What Is Animation In Bangla

অ্যানিমেশন কি (what is animation in bangla) বা অ্যানিমেশন বলতে কি বুঝায় এই সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

আপনি যদি অ্যানিমেশন সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আজকের আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার অবশ্যই কাজে আসবে।

অ্যানিমেশন কি | What Is Animation In Bangla

অ্যানিমেশন হলো গল্পকারদের গল্প বলার নতুন একটি ধরন বা আইডিয়া বলা যেতে পারে। অ্যানিমেশনের মাধ্যমে কোনো ঘটনা বর্ণনা করা যেতে পারে।

আবার অন্য ভাবে বলতে গেলে পরস্পর কয়েকটি ছবি যখন চলমান বা জীবন্ত হয়ে উঠে তখন তাকে অ্যানিমেশন বলা হয়। প্রাচীন কালের অ্যানিমেশন স্বচ্ছ সেলুলয়েড শীটে আঁকা ছবি এবং সেই ছবি গুলোকে একত্রিত করে চলমান রূপ দেওয়া।

আসলে অ্যানিমেশন বলতে চলমান ছবির প্রক্রিয়া বা ধরণকে বুঝায়। যেমন – হাতে কলম পদ্ধতিতে চলমান ছবি, ডিজিটাল ভিডিও মাধ্যম এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে জিআইএফ ব্যবহার করা হয়। 

একই ভাবে অ্যানিমেশন দেখানোর জন্য ক্যামেরা, কম্পিউটার অথবা প্রজেক্টর ব্যবহার করা হয়। সহজে একে চলমান চিত্র বলা যায়।

আশাকরি, অ্যানিমেশন কি, / অ্যানিমেশন মানে কি বা অ্যানিমেশন কাকে বলে বিষয়টা সহজে বুঝতে পারছেন।

অ্যানিমেশন উৎপত্তি

অ্যানিমেশন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ল্যাটিন শব্দ anima (আত্মা) থেকে। animate শব্দের অর্থ হলো প্রাণ দান করা বা আত্মা দান করা।

মানে একটি জড় বস্তুর প্রাণ দান করা। অ্যানিমেশনের ক্ষেত্রে স্থির কত গুলো চিত্রকে গতিশীল করে প্রাণ দেওয়া হলে তাকে অ্যানিমেশন বলা হয়।

অ্যানিমেশন কত প্রকার?

ডিজিটাল যুগ হিসেবে অ্যানিমেশনকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –

  1. ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশন
  2. ২ডি অ্যানিমেশন (ভেক্টর)
  3. ৩ডি অ্যানিমেশন
  4. মোশন গ্রাফিক্স
  5. স্টপ মোশন

চলুন নিচে থেকে এই ৫ প্রকার অ্যানিমেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।

ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশন

ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশন হলো চলচিত্র ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনের একটি প্রাচীন রুপ। এই পদ্ধতিকে আবার সেল অ্যানিমেশন বলা হয়।

ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনে ছবি গুলোকে সেলুলয়েডের স্বচ্ছ কাগজের মধ্যে আঁকা হয়। অ্যানিমেটেড সিকোয়েস্ন তৈরি করার জন্য অ্যানিমেটরকে অবশ্যই প্রত্যেকটি ফ্রেম আঁকতে হয়।

এটা কিছুটা ফ্লিপবুকের মতো কাজ করে। ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশন অনেকটা ২ডি অ্যানিমেশনের মতো হয়। ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনের অন্যতম উদাহরণ হলো আলাদিন, দ্য লায়ন কিং ইত্যাদি।

২ডি অ্যানিমেশন (ভেক্টর) | 2d animation কি

সাধারণত ২ডি অ্যানিমেশন ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনের মধ্যে পড়ে। যেমন – পিনোকিও, বিউটি অ্যান্ড দ্য বিস্ট ইত্যাদি।

তবে, ভেক্টর অ্যানিমেশন ট্রেডিশনাল অ্যানিমেশনের চেয়ে কিছুটা আলদা যেটা ২ডি অ্যানিমেশন হিসেবে ধরা হয় না।

jpg, gif, bmp এই ফরম্যাটের ছবি গুলো হলো পিক্সেল ছবি, যা ছবির মান প্রভাবিত হয়। এই ছবি গুলোকে ছোট বা বড় করা যায় না এবং এর গ্রাফিক্স ও রেজুলেশন নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

ভেক্টর ছবি গুলো ছোট ছোট বিন্দু দ্বারা পরিপূর্ণ থাকে। যখন গ্রাফিক্স তৈরি করবেন তখন এই বিন্দু  গুলোকে সংযুক্ত করে সম্পর্ন ছবি তৈরি করা হয়। এর মাধ্যমে সহজে নিজের মনেন মতো ছবি তৈরি করা যায়।

৩ডি অ্যানিমেশন (3d animation)

বর্কমানে ৩ডি অ্যানিমেশন বা কম্পিউটার অ্যানিমেশন খুব সাধারণ একটি বিষয়। এখন হাতে কলমে ছবি না আঁকে গ্রাফিক্স ডিজাইন এর মাধ্যমে ছবি আঁকা হয়।

কম্পিউটারে ছবি আঁকার জন্য একটি টুল এবং ৩ডি অ্যানিমেশন এখন একটি প্রগতিশীল প্রক্রিয়া।  ৩ডি অ্যানিমেটড মুভিতে অ্যানিমেটর চরিত্রকে চারিদিকে সরানোর জন্য প্রোগ্রাম লেখা হয়।

সেই চরিত্রের সকল অংশ সঠিক অবস্থানে থাকলে সেই ছবিটকে ডিজিটাল ফ্রেমে বসানো হয়। প্রতিটি ফ্রেমের জন্য একই নিয়ম মেনে কাজ করতে হয় এবং কম্পিউটার প্রত্যেকটি ফ্রেমের মোশন গণনা করে। 

আশাকরি, সহজে বুঝতে পারছেন 3d animation কি বা কাকে বলে।

মোশন গ্রাফিক্স

মোশন গ্রাফিক্স হলো ডিজিটাল অ্যানিমেশনের একটি অংশ। যা সাধারণত বিজ্ঞাপন, চলচিত্রের শিরোনাম সিকোয়েন্সের জন্য ব্যবহার করা হয়।

অ্যানিমেশনের সব কিছুই মাল্টিমিডিয়ার সাথে জড়িত। মোশন গ্রাফিক্স সাধারণত ব্যবসা ভিত্তিক অ্যানিমিশনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

স্টপ মোশন

স্টপ মোশনে ক্লেমেশন, পিক্সেলেশন, কাটআউট অ্যানিমেশন, অবজেক্ট মোশন আরো অনেক কিছু রয়েছে। কিন্ত, এর প্রধান ধারণা ফ্লিপবুকের মতো।

স্টোপ মোশনে প্রত্যেকটি ফ্রেমে আলদা আলদা ছবি সংগ্রহ করে একত্রিত করে। ৩ডি কম্পিউটার অ্যানিমেশনের তুলনায় স্টপ গল্প বলার জন্য অনেক পুরাতন একটি রুপ।

অ্যানিমেশন তৈরি | এনিমেশন ভিডিও তৈরি করা সফটওয়্যার

আপনি চাইলে সহজে অ্যানিমেশন তৈরি করতে পারবেন এর জন্য বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার রয়েছে। নিচে এমনই কয়েকটি এনিমেশন ভিডিও তৈরি করা সফটওয়্যার এর নাম উল্লেখ করেছি।

  • 3D Max
  • Maya
  • Adobe After Effect
  • Flash
  • Pencil

আপনারা উপর থেকে জেনেছি অ্যানিমেশনের দুইটি দিক রয়েছে। একটি হলো 3d animation এবং অপরটি হলো 2d animation.

এই দুই প্রকার অ্যানিমেশন তৈরি করার জন্য দুই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। যেমন – 3D animation তৈরি করার জন্য 3D max, maya ইত্যাদি সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করা হয়।

আর 2D animation গুলো তৈরি করার জন্য flash, pencil সহ আরো অন্যান্য অ্যানিমেশন সফটওয়্যার গুলো ব্যবহার করা হয়।

অ্যানিমেশন কোর্স কোথায় থেকে করবেন?

আপনি যদি অ্যানিমেশন ভিডিও বা অ্যানিমেশন কার্টুন তৈরি করা শিখতে চান তাহলে অনলাইনের বিভিন্ন অ্যানিমেশন কোর্স করতে পারেন।

তাছাড়া, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখান থেকে আপনি অ্যানিমেশন তৈরির কোর্স করার জন্য সরাসরি ভর্তি হতে পারবেন।

এইসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য আপনার ৫ হাজার টাকা থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। আর আপনি যদি অনলাইনের মাধ্যমে অ্যানিমেশন কোর্স করেন তাহলে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে কোর্স করতে পারবেন। 

অ্যানিমেশন কোর্স করার জন্য আপনি 10 Minute School এর এই অনলাইন কোর্স করতে পারবেন। কোর্সটি মূল্য ৯৫০ টাকা মাত্র।

এছাড়া, আপনারা যদি অনলাইন ফ্রি কোর্স করতে চান তাহলে sobai shikhi | সবাই শিখ এই ডিজিটাল লানিং ব্লগের মাধ্যমে ফ্রি টিউটোরিয়াল ভিডিও পেয়ে যাবেন।

অ্যানিমেশন শেখার জন্য কি গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রয়োজন?

অ্যানিমেশন শেখার জন্য আলদা ভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার প্রয়োজন হবে না। কারণ, অ্যানিমেশন তৈরি করার জন্য আপনার যতটুকু গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখার প্রয়োজন হবে সেটুকু তারা আপনাকে শিখিয়ে দিবে।

যেমন – এডোবি ফটোশপ এবং Adobe After Effect এর কিছু টুলের ব্যবহার জানতে হবে। আর অ্যানিমেশন শেখার জন্য গ্রাফিক্স জানতে হবে।

আপনি যদি গ্রাফিক্স না জানেন তাহলে অ্যানিমেশন শেখা যাবে না একথাটি সম্পর্ন ভুল। তবে, কারও যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন তাহলে অ্যানিমেশন শেখা অনেকটা সহজ হয়ে যাবে।

ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যানিমেশন এর গুরুত্ব

চলচ্চিত্র বা টিভির বাহিরে অ্যানিমেশন ডিজিটাল স্পেসে ব্যবহার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়। বিশেষ করে, ডিজাটাল বিজ্ঞাপন, ওয়েব ডিজাইন, অ্যাপ ডিজাইন করার জন্য অ্যানিমেশন প্রয়োজন।

ব্যবসার ক্ষেত্রে অ্যানিমেশন ব্যবহার করার উপায় গুলো হলো –

১. কোম্পানির প্রোমোশন ভিডিও তৈরি করার জন্য অ্যানিমেশন দরকার হয়। এতে খরচ অনেক কম এবং অ্যানিমেশন ভিডিও তৈরি করার জন্য কোনো অভিনেতা বা অভিনেত্রীর প্রয়োজন হয় না।

২. ব্যানার বিজ্ঞাপনের প্রধান আকর্ষণ হলো অ্যানিমেশন। সঠিক অ্যানিমেশন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শ্রোতাদের সাথে নিজের সংযোগ বৃদ্ধি করে।

৩. ওয়েবসাইটের লোডিং পেজ তৈরি করার জন্য অ্যানিমেশন দরকার হয়। তাছাড়া কোনো ভিজিটর যখন ওয়েবসাইট ভিজিট করে তখন অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে তাকে ওয়েবসাইটে বেশি সময় আটকে রাখা যায়।

অ্যানিমেশন এর ইতিহাস

প্রথম ১৯২০ সালে ইউরোপে কয়েকটি অ্যানিমেশন স্টুডিও তৈরি হয়েছিলো। এই স্টুডিও গুলো দর্শক আকর্ষণ করার জন্য জন্য বিভিন্ন ভাবে চেষ্টা করতে লাগলো।

ঔ সময় স্টুডিওতে যারা কার্টুন তৈরির কাজ করতো তাদের আঁকা ছবি গুলো দেখানো হতো। তাদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করার জন্য জনপ্রিয় কার্টুন গুলো দর্শকদের দেখানো হতো।

এরপর অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র হিসেবে “টয় স্টোরি” প্রকাশ পায়। এই চলচ্চিত্রটি তৈরি করা হয়েছে সম্পর্নটা কম্পিউটারের সাহায্যে।

টয় স্টোরি এর আগে ১৯৩৭ সালে ওয়াল্ট ডিজনির প্রথম অ্যানিমেশন সিনেমা “স্নো হয়াইট এন্ড দ্যা সেভেন দ্বার্ফস” মুক্তি পায়। এই সিনেমা চলচ্চিত্র দুনিয়াতে অনেক বড় পরিবর্তন আনেন।

প্রথম ফ্লিপ বুক অ্যানিমেশন প্রকাশ করেন জন বার্নস লিনেট। পরে ১৮৬৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি অ্যানিমেশন দুনিয়ায় অনেক বড় পরিবর্তন আনেন।

পরে ১৮৯৪ সালে হারমান কেসলার ফ্লিপ বুকের ভিন্ন রূপ দেয় এবং তার নামকরণ করেন মুটোস্কোপ। সর্বশেষে ১৮৯৫ সালে লুমিয়ের ভ্রাতৃদ্বয় সিনেমাটোগ্রাফ আবিষ্কার করেন।

এরপর থেকে দুনিয়াতে শুরু হয় নতুন এক অধ্যায় সিনেমা যুগ। এর কিছু দিনের মধ্যে সিনেমাতে বিভিন্ন অ্যানিমেটড এফেক্ট যুক্ত হতে শুরু করে। প্রথম “এনচ্যান্টেড ড্রয়িং” সিনেমাতে অ্যানিমেটড এফেক্ট ব্যবহার করা হয়।

অ্যানিমেশন এর সুবিধা ও অসুবিধা গুলো

প্রত্যেক জিনিসের একটি সুবিধা ও অসুবিধা থাকে। ঠিক একইভাবে অ্যানিমেশনের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো। 

সুবিধা

অ্যানিমেশন একটি লাভজনক সৃজনশীল পেশা হিসেবে ধরা হয়। শুধু অ্যানিমেশন শিখলে হবে না, এর বহিঃপ্রকাশ করার জন্য সৃজনশীল চিন্তা করার দরকার। 

পৃথিবীতে অ্যানিমেশনের বাজার অনেক বড়। তাই আপনি একজন অ্যানিমেশন শিল্পী হিসেবে দেশে বা বিদেশে চাকরির সুযোগ পাবেন।

অ্যানিমেশন শেখার জন্য নিদিষ্ট কোনো বয়স নেই। আপনি যেকোনো বয়সে শিখতে পারবেন। তবে, ভালো হয় এইচএসসি পরিক্ষার পরে এই কাজ শিখলে।

অসুবিধা

অ্যানিমেশন পেশায় আপনাকে অনেক সময় ধরে কাজ করতে হবে। যার ফলে আপনার শরীরের উপর অনেকটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। তাই সঠিক ব্যবস্থা না নিলে কাজ করার ক্ষমতা হারাতে পারেন।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলের বিষয় অ্যানিমেশন কি (what is animation in bangla). আশাকরি, এই আর্টিকেলটি পড়ে animation কি সহজে বুঝতে পারছেন।

শেষে এই সম্পর্কে যদি কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে অবশ্যই লিখে জানাবেন এবং ভালো? লাগলে সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করবেন।

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap