আজকের আর্টিকেলের বিষয় প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ নিয়ে। তাই আজকে আলোচনা করবো কিভাবে প্রতিবেদন লিখতে হয় এবং প্রতিবেদন লেখার নিয়ম pdf ফাইল সম্পর্কে।
আমাদের প্রত্যেকের প্রতিবেদন লেখার নিয়ম সম্পর্কে জানা উচিত। অনেকে জানেন না সহজে কিভাবে প্রতিবেদন লেখা যায়। এই নিয়ে অনেকে চিন্তায় পড়ে যায়।
চিন্তা করার দরকার নেই কারণ, আজকের আর্টিকেলের কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করলে আপনি সহজে প্রতিবেদন লেখা শিখে নিতে পারবেন।
তবে, এর আগে আপনাকে জানতে হবে প্রতিবেদন কি, এর বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয়তা গুলোর সম্পর্কে।
প্রতিবেদন কি?
প্রতিবেদন কথাটি দুইটি শব্দ দিয়ে গঠিত হয়েছে। যেমন – প্রতি + বেদন = প্রতিবেদন। বলা যায় যে প্রতি উপসর্গ যোগে বেদন হলো প্রতিবেদন।
বেদন কথাটির আক্ষরিক অর্থ হলো জ্ঞাপন। তাহলে, প্রতিবেদনের মানে হলো কারে প্রতি কিছু জ্ঞাপন। তবে, এর আসল সংজ্ঞাটা একটু অন্য রকম।
প্রতিবেদনের সংজ্ঞাঃ প্রতিবেদন হলো একটি বিশেষ নথি, যেটা একজন নিদিষ্ট পাঠকের জন্য সংগঠিত বিন্যাসে তথ্য উপস্থাপন করে।
অনেক ক্ষেত্রে প্রতিবেদন মৌখিক ভাবেও প্রতিবেদন প্রদান করা যেতে পারে তবে, প্রতিবেদনের বেশি ভাগ লিখিত আকারে হয়ে থাকে।
প্রতিবেদন কত প্রকার ও কি কি?
প্রতিবেদন মূলত তিন (৩) প্রকার। যথা-
- সংবাদ প্রতিবেদন
- প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন
- সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
চলুন, প্রতিবেদন এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জেনে আসি।
সংবাদ প্রতিবেদন
সংবাদপত্রে প্রকাশ করার জন্য প্রতিবেদন গুলো লেখা হয় তাকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। এর জন্য প্রত্যেক সংবাদপত্রের নিজস্ব এবং প্রতিবেদন থাকে।
প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন
কোনো প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলী, ঘটনা বা অবস্থা, কাঠামো এবং মিটিং এর সিদ্ধান্ত ইত্যাদি যাচাই করে সেই সম্পর্কে যে তথ্য গুলো তুলে ধরে যে বিবরণী প্রণয়ন করা হয় তাকে প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন বলে।
সম্পাদকীয় প্রতিবেদন
যখন কোনো সংগঠন, ক্লাব, সংবাদপত্র, প্রকাশনা ইত্যাদির সম্পাদক নিজের নিজস্ব মতামত বা সিদ্ধান্ত প্রতিবেদনের আকারে প্রকাশ করে তাকে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন বলে।
এই তিন প্রকার ছাড়াও আরো বিভিন্ন প্রকার প্রতিবেদন হয়ে থাকে। যেমন,
- আইনি প্রতিবেদন
- পুলিশি প্রতিবেদন
- সামরিক প্রতিবেদন
- তদন্ত প্রতিবেদন
- পরিদর্শনের প্রতিবেদন
- হিসাবের প্রতিবেদন
- দোকানের প্রতিবেদন
- বইয়ের প্রতিবেদন
- বাষিক প্রতিবেদন
- ঋণের প্রতিবেদন
- শিক্ষা সংক্রান্ত প্রতিবেদন
- খেলাধুলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন
- আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদন
- মূল্যয়ন প্রতিবেদন
- জন সংখ্যার প্রতিবেদন
- বৈজ্ঞানিক প্রতিবেদন
প্রতিবেদন লেখার প্রয়োজনীয়তা
- মানুষের দৈনন্দিন জীবনে প্রতিবেদন এর চাহিদা ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিবেদনের মাধ্যমে যেকোনো কাজের বিষয় পরিকল্পনা গ্রহণ, সংগঠনের মিটিং এর সিদ্ধান্ত, সমন্বয়, নির্দোষনা ইত্যাদি কাজে প্রতিবেদন ব্যবহার করা হয়।
- বর্তমানে আইনি ঝামেলা, খেলাধুলার খরব ইত্যাদি প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রকাশিত করা হয়।
- ব্যবসা বানিজ্য, প্রশাসনিককার্য, আইন আদালত সহ আরো বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিবেদন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- বৈজ্ঞানিক গবেষণা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন লেখা প্রতিবেদনের আকারে প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য
যেকোনো প্রতিবেদনকে আদর্শ প্রতিবেদন বলা যাবে না। কারণ, প্রতিবেদনের মধ্যে কয়েকটি আদর্শ না থাকলে সেটা আদর্শ প্রতিবেদন বলা না।
নিচে একটি আদর্শ প্রতিবেদন বৈশিষ্ট্য গুলো উল্লেখ করা হল –
- পরিকল্পিত রূপরেখা
- বস্তুনিষ্ঠ
- সংগতিপূর্ণ উদ্দেশ্য
- সহজবোধাতা
- সংহত ভাষা
চলুন নিচে থেকে এই প্রতিবেদনের বৈশিষ্ট্য গুলোর সম্পর্কে জেনে আসি।
পরিকল্পিত রূপরেখা
একটি আদর্শ প্রতিবেদন তৈরি করার সময় চালচিত্র, রূপরেখা তৈরি করে নেওয়া হয়। এগুলো যদি আপনি না করেন তাহলে প্রতিবেদনের সৌন্দর্য পরিবেশনে ঘাটতি দেখাবে।
যেমন – প্রতিবেদনটি কোন প্রকার হতে হবে সেটা ভেবে নেওয়া, কি কি শিরোনাম ব্যবহার করতে হবে, লেখার সময় কয়েকটি অংশ ব্যবহার করতে হবে, তারিখ ঠিকমতো দেওয়া হয়েছে কিনা ইত্যাদি।
মূল কথা হলো, প্রতিবেদনের কাঠামো কেমন হবে সেটা ভেবে নিয়ে প্রতিবেদন লেখা উচিত। প্রত্যেকটি অংশ যথাযথ ভাবে লিখতে পারলে প্রতিবেদনটি সুন্দর হবে।
বস্তুনিষ্ঠ
একটি আদর্শ প্রতিবেদন অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে। প্রতিবেদনে লক্ষ্য রাখতে হবে প্রকৃত ঘটনা, সঠিক তথ্য, সহজ, ভাষায় স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
সংগতিপূর্ণ উদ্দেশ্য
প্রত্যেকটি প্রতিবেদন লেখার পিছনে একটি সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। তাই প্রতিবেদনকে এমন ভাবে লিখতে হবে যাবে মূল বা সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থেকে যেন বিচ্যুত না হয়।
সহজবোধাতা
আদর্শ প্রতিবেদন এমন ভাবে লিখতে হবে যাতে সকল শ্রেণীর লোকেরা পড়ে বুঝতে পারে। তাই প্রতিবেদনের ভাষা সহজ, সরল ও স্পষ্ট হতে হবে।
সংহত ভাষা
প্রত্যেকটি প্রতিবেদন লেখার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে যেন ভাষা সহজ সরল হয়। যদিও প্রতিবেদনের মূল বিষয় সুন্দর এবং সহজ ভাবে প্রকাশ করতে পারাটা অনেক কঠিন।
মনে রাখবেন, প্রতিবেদন লেখার সময় এর বাহিরে যেন কোনো বাড়তি অপ্রয়োজনীয় তথ্য যুক্ত না হয়। সব সময় যথাযথ সংহত ভাষায় লিখতে হবে।
প্রতিবেদনের বিভিন্ন অংশ
প্রকিবেদনের তিনটি অংশ থাকে। যথা-
- প্রারম্ভিক অংশ
- প্রধান অংশ
- পরিশিষ্ট অংশ
নিচে থেকে প্রতিবেদনের এই তিনটি অংশ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আসি।
প্রারম্ভিক অংশ
প্রতিবেদনের প্রারম্ভিক অংশে প্রতিবরদনের মূল শিরোনাম, প্রাপকের নাম, ঠিকানা এবং বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত সার কথা থাকবে।
প্রধান অংশ
প্রকিবেদনের প্রধান অংশে থাকবে মূল বিষয় সম্পর্কে ভূমিকা, মূলপ্রতিবেদন, উপসংহার এবং সুপারিশ থাকবে।
পরিশিষ্ট অংশ
প্রতিবেদনের পরিশিষ্টে থাকবে তথ্য নির্দেশ, গ্রন্হ বিবরণী, আনুসঙ্গিতা এবং কমিটির তালিকা।
প্রতিবেদন লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত থাকলে উত্তম প্রতিবেদন প্রণয়ন করা সম্ভব। এই পদ্ধতি গুলোর মধ্যে রয়েছে প্রতিবেদনের শ্রোণী, বৈশিষ্ট্য, আকার, বিন্যাস।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ
আমরা প্রতিদিনের খবরের কাগজে যে প্রতিবেদন গুলো দেখি তার মধ্যে প্রথম শ্রোণীর প্রত্রিকার প্রতিবেদন গুলোকে আদর্শ প্রতিবেদন বলা হয়।
আপনি যদি এই প্রত্রিকা গুলো সংবাদ ভালোভাবে পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন প্রতিবেদন লেখার পদ্ধতি সম্পর্কে।
তাই আপনাকে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ গুলো ভালো করে পড়ে দেখতে হবে। মানে আপনাকে কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে হবে।
এই নিয়ম গুলো কোনো ধরাবাধা নিয়ম না। মাত্র কয়েকটি কৌশল অবলম্বন করতে পারলে আপনি প্রতিবেদনকে সুন্দর করে তুলতে পারবেন।
তাই আপনারা যাতে সুন্দর একটি প্রতিবেদন লিখতে পারেন, তার জন্য নিচে কয়েকটি নিয়ম দেখানো হয়েছে।
হেডলাইন বা নামকরণ
প্রত্যেকটি প্রতিবেদনে অবশ্যই একটি হেডলাইন বা নামকরণ থাকবে। এটা হতে হবে আকর্ষণীয় যাতে সহজে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
হেডলাইন আকর্ষণীয় হলে পাঠকগণ সম্পর্ন প্রতিবেদন পড়তে আগ্রহ বোধ করবেন। তবে, সাধারণ হেডলাইন প্রতিবেদনে তেমন ভাবে সমাদর করতে পারে না।
এমন ভাবে হেডলাইন দিবেন যাতে প্রতিপাদ্যটি সরাসরি বোঝা যায়। প্রতিবেদন লেখার হেডলাইন এর উদাহরণ হলো,
- বন্যা কবলিত মানুষের পাশে এগিয়ে এলো ক্লাব।
- শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য স্কুলে রক্তদান শিবির।
- ঢাকা থেকে ফেরার পথে বাস দুর্ঘটনা:আহত ৫ জন।
প্রতিবেদক-পরিচিতি, স্থান
সংবাদপত্রে প্রতিবেদনের হেডলাইন লেখার পরে মূল লেখার প্রথমে প্রতিবেদকের নাম, পরিচয়, তারিখ, স্থান লিখতে হবে।
এই গুলো কমা (,) চিহ্ন দ্বারা পৃথক করা হয়। যেমন – নিজস্ব সংবাদদাতা, ২৬ই জানুয়ারি, ২০২২, সাতক্ষীরা।
সূচনা
প্রতিবেদনের সূচনা হবে সংক্ষিপ্ত আকারে। প্রতিবেদনের প্রথম ২টি ব্যাকের মধ্যে বিষয়ের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দিলে ভালো হবে এবং এই ২টি ব্যাকের মধ্যে সূচনার দৈর্ঘ্য সীমাবদ্ধ হবে।
মনে রাখবেন, সূচনার অংশটি আলদা অনুচ্ছেদে না লিখে, মূল প্রতিবেদের সাথে লিখতে হবে। প্রতিবেদনে আলাদা অনুচ্ছেদ করার প্রয়োজন নেই।
মূল প্রতিবেদন
সংবাদ প্রতিবেদনের ছোট অংশটি লেখা হয়ে গেলে মূল ঘটনার বিবরণ দিতে সহজ সরল ভাষাতে। প্রতিবেদনের মধ্যে ভাষায় মারপ্যাঁচ দেওয়া যাবে না।
কারণ, সংবাদপত্রে এই ধরনের প্রতিবেদন গুলো লেখা হয় সাধারণ পাঠকদের জন্য।
ঘটনার বিবরণ দেওয়া জন্য যে বিষয় গুলো লিখতে হবে।
ঘটনাটি স্থান, কাল, কখন, কোথায় ঘটনাটি ঘটেছে সেটা লিখতে হবে। তাছাড়া, ঘটনা স্থানের আশেপাশে বিখ্যাত জায়গার নাম লিখতে হবে। ঘটনার পিছনে যদি একাধিক কারণ থাকে তাহলে সেটাও উল্লেখ করতে হবে।
ঘটনার ফলাফল
ঘটনার ফলাফল ভালো এবং খারাপ দুইটা হতে পারে। তাই এই দুই প্রকার ফল নিয়ে বিস্তারিত ভাবে লিখতে হবে।
এক্ষেত্রে আপনি বিশ্বাসযোগ্য কিছু তথ্যের প্রমান দিতে হবে। যার সাথে বাস্তবের কিছু মিল থাকা অত্যান্ত জরুরি। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় লোকেদের মতামত নেওয়া জরুরি, যারা পত্যক্ষদর্শী।
বিভিন্ন কর্তাব্যাক্তি যেমন, স্থানীয় নেতা, পুলিশ, আইনজীবী এবং স্থানীয় মানুষের বক্তব্য নিতে হবে।
প্রতিবেদক নিজের মূল্যায়ন
প্রতিবেদনের শেষে সংক্ষিপ্ত আকারে ২-৩ লাইনের মধ্যে নিজের মূল্যায়ন যোগ করতে হবে। মনে রাখবেন, কখনো প্রতিবেদনের মতামত পাঠকদের উপর চাপিয়ে দিবেন না।
আপনার প্রতিবেদনের মূল উদ্দেশ্য হবে প্রতববেদনের মাধ্যমে পাঠকদের নিজস্ব চিন্তাভাবনা, মতামত যেন গড়ে তুলতে পারে।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম pdf
অনেকে প্রতিবেদন লেখার নিয়ম pdf ফাইল আকারে নিতে চেয়েছেন। কারণ, প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও নমুনা দেখার জন্য।
তাই, নিচের লিংকে কয়েকটি প্রতিবেদনের নমুনা আমি দিয়ে দিয়েছি। আপনারা এখান থেকে দেখে নিতে পারেন।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম pdf ফাইল
শেষ কথা
আজকের আর্টিকেল থেকে আমরা জানলাম, প্রতিবেদন লেখার নিয়ম ও উদাহরণ বা কিভাবে প্রতিবেদন লিখতে হয় সেই সম্পর্কে।
একটি আদর্শ প্রতিবেদনে কি কি বৈশিষ্ট্য থাকে সেটাও আমি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করেছি। আশাকরি, প্রতিবেদন লেখা নিয়ে আপনাদের আর কোনো সমস্যা হবে না।
শেষে, আমার লেখাটি যদি আপনাদের কাছে ভালো লাগে কমেন্টে জানাবেন এবং ভালো লাগলে শেয়ার করবেন।