অনেকে জানতে চাচ্ছেন মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করার উপায় বা মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং করা যাবে কিনা সেই সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে আলোচনা করবো।
বর্তমান ক্যারিয়ার হিসেবে ডিজিটাল মার্কেটিং অনেক লাভজনক। এখন আপনি যদি প্রশ্ন করেন Digital marketing কতটা লাভজনক, তাহলে গুগল সার্চ করলে জানতে পারবেন।
বর্তমানে আমাদের সকলের কাছে ইন্টারনেটের ব্যবহার এতোটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে আমরা সারাদিন ইন্টারনেটে কাটিয়ে দেয়।
মানে আমরা সবসময় ইন্টারনেটের মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, অনলাইন শপিং, গুগল সার্চ ইঞ্জিন ইত্যাদি ব্যবহার করি।
এভাবে লাখ লাখ মানুষ সব সময় ইন্টারনেটে সক্রিয় রয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক দিন নতুন নতুন মানুষ ইন্টারনেটে যুক্ত হচ্ছে।
এক্ষেত্রে যেকোনো কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট মার্কেটিং করার জন্য physical marketing এর তুলনায় ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং এর গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে।
যেহেতু অধিকাংশ মানুষরা ইন্টারনেটে সক্রিয় থাকার কারণে প্রত্যেকটা কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট ইন্টারনেটের মাধ্যমে মার্কেটিং করছেন।
এর মাধ্যমে তাদের প্রোডাক্ট গুলো খুব সহজে লাখ লাখ মানুষের কাছে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পৌঁছে দিতে পারছেন এবং তাদের বিজ্ঞাপন দেওয়া প্রোডাক্টের সেল ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে বুঝতে পারবেন, প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর আলাদা আলাদা চাহিদা রয়েছে।
এই চাহিদা বা সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্মার্টফোন, কম্পিউটার এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রোডাক্ট বিক্রি করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিজিটাল মার্কেটিং।
আপনি যদি ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে ডিজিটাল মার্কেটিং সম্পর্কে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন তাহলে মার্কেটপ্লেস থেকে প্রচুর পরিমানে আয় করতে পারবেন।
এবার মূল প্রশ্নে আসা যাক, কিভাবে মোবাইল দ্বারা ডিজিটাল মার্কেটিং করবেন বা মোবাইলে ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব হবে কিনা এটা জানার আগে আপনাকে জানতে হবে ডিজিটাল মার্কেটিং কি?
ডিজিটাল মার্কেটিং কি (What is digital marketing in bangla)
ডিজিটাল মার্কেটিং বলতে মানুষ সাধারণত অনলাইনে প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপন প্রচার দেওয়াকে বুঝায়।
এই বিজ্ঞাপন হতে পারে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে, হতে পারে সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং এর মাধ্যমে, হতে পারে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর মাধ্যমে আবার হতে পারে ইমেইল মার্কেটিং এর মাধ্যমে।
আবার ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচার করাকে ডিজিটাল মার্কেটিং বলে। এখানে ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া বলতে রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদিকে বুঝানো হয়েছে।
এছাড়া মোবাইলে ইন্সট্যান্ট মেসেঞ্জিং, মোবাইল এপ্লিকেশন, ইলেক্ট্রনিক বিলবোর্ড ইত্যাদির মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দেখানো কেও ডিজিটাল মার্কেটিং বলা হয়।
আপনার ব্যবসাকে আধুনিক যুগে টিকিয়ে রাখতে হলে অবশ্যই আপনাকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
আশাকরি, ডিজিটাল মার্কেটিং কি সেটা সহজে বুঝতে পারছেন কিন্তু ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপ গুলো কি কি সেটা কি আপনি জানেন?
Digital marketing এর ধাপ গুলো জানার পরে আপনি সহজে বুঝতে পারবেন মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য কোন কাজ গুলো আপনার জন্য উপযুক্ত।
ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপ গুলো কি কি?
বর্তমান ডিজিটাল মার্কেটিং গুলোর অনেক গুলো ধাপ রয়েছে। এই ধাপ গুলোর মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটাররা তাদের প্রয়োজনীয় প্ল্যাপফর্ম গুলোতে ডিজিটাল মার্কেটিং করে থাকেন।
চলুন নিচে থেকে ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপ সমূহ জেনে আসি।
- কন্টেন্ট মার্কেটিং
- (এসইও) বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন
- ইমেইল মার্কেটিং
- সিপিএ মার্কেটিং
- (এসএমএম) বা সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
- (এসইএম) বা সার্চ ইঞ্জিন মার্কেটিং
- এফিলিয়েট মার্কেটিং
আপনারা ডিজিটাল মার্কেটিং এর ধাপ গুলোর সম্পর্কে জানতে পারছেন। এখন আপনি নিজে নিজে বুঝতে পারবেন কোন কোন মার্কেটিং গুলো মোবাইল দিয়ে করা সম্ভব।
মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং কোন কোন কাজ গুলো সম্ভব?
মোবাইলের মাধ্যমে ডিজিটাল মার্কেটিং করার জন্য উপরে আপনাদের সাথে ডিজিটাল মার্কেটিং এর যে ধাপসমূহ উল্লেখ করেছি তার মধ্যে অল্প কিছু কাজ মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন।
তাছাড়া, আপনি যদি প্রোফেশনাল ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করতে চান সেক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কম্পিউটার বা ল্যাপটপ লাগবে।
মনে রাখবেন, কম্পিউটার বা ল্যাপটপ এবং এর সাথে ইন্টারনেট কানেকশন না থাকলে কখনোই ডিজিটাল মার্কেটিং বা অনলাইন মার্কেটিং করতে পারবেন না।
সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং
আধুনিক এই যুগে আমরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম গুলো ব্যবহার করি। এই প্লাটফর্ম গুলোর মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব ইত্যাদি।
আপনি চাইলে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট গুলো মোবাইলের মাধ্যমে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্মে বিজ্ঞাপন বা মার্কেটিং এর মাধ্যমে প্রচার করতে পারেন।
কারণ, আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার সকল কাজ গুলো সহজে করতে পারবেন। তাই মোবাইল দিয়ে আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং করতে পারবেন।
তবে, আমার ব্যাক্তিগত মতো মোবাইলের মাধ্যমে কখনো প্রোফাশনাল ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব না।
যদিও আপনি সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং এর কিছু কাজ মোবাইল দিয়ে করতে পারবেন কিন্ত ভবিষ্যতে আপনার অবশ্যই কম্পিউটার বা ল্যাপটপ ব্যবহার করতে হবে।
ডিজিটাল মার্কেটিং কেন প্রয়োজন?
আধুনিক যুগে ডিজিটাল মার্কেটিং প্রত্যেক ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। কারণ, অধিকাংশ মানুষ এখন প্রোডাক্ট ক্রয় করার ইন্টারনেট থেকে জেনে নেয়।
তাছাড়া অধিকাংশ মানুষরা এখন দোকানে ঘুরে ঘুরে পণ্য না কিনে বাসায় বসে অনলাইনের মাধ্যমে পণ্য ক্রয় করে থাকে।
আপনি যদি একজন ব্যবসায়ী হন তাহলে পণ্য বেশি সেল দেওয়ার জন্য অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে পণ্যকে মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে।
চলুন বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কিছু তথ্য জেনে আসি।
আধুনিক বিশ্বে প্রায় ২ বিলিয়ন এর বেশি মানুষ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন। আর দিনের পর দিন এর চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
যত বেশি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করবে তত বেশি মানুষের সামনে আপনার ব্যবসার পণ্য মার্কেটিং করতে পারবেন। এক্ষেত্রে যত বেশি মার্কেটিং তত বেশি সেল হবে।
আধুনিক বিশ্বে প্রায় ৫.১১ বিলিয়ন মানুষ মোবাইল ব্যবহার করেন। আরো দ্রুত গতিতে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাছাড়া এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা যোগাযোগ করার জন্য একাধিক মোবাইল ব্যবহার করেন।
এই মোবাইল হলো ক্রেতাদের পণ্য সম্পর্কে তথ্য জানার সেরা মাধ্যম। কারণ, অধিকাংশ মোবাইল গুলোর সাথে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে।
স্ট্যাটিসটিক্সের সার্ভের রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে প্রায় ৮৪% এর বেশি বিক্রেতা সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ক্রেতাদের তথ্য সংগ্রহ করে।
তারা অন্য একটি রিপোর্টে বলেছে সারা বিশ্বের ৫৫% এর বেশি মানুষ পণ্য ক্রয় বিক্রয় করার জন্য সামাজিক যোগাযোগ প্লাটফর্ম এর উপর নির্ভরশীল।
সোশ্যাল মিডিয়া থেকে পছন্দের পণ্যের সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে এবং ক্রেতাদের রিভিউ পড়ে পছন্দ হলে অনলাইনের মাধ্যমে ক্রয় করে।
৪৩% এর বেশি ক্রেতা গুগল সার্চ করে নিজেদের পছন্দের ই-কমার্স ওয়েবসাইট গুলো ভিজিট করে এবং ৫১% ক্রেতা মোবাইল দিয়ে তাদের কেনাকাটা করে। এর সংখ্যা কিন্ত দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
আবার ৭০% ক্রেতা পণ্য ক্রয় করার আগে পণ্য সম্পর্কে জানার জন্য ইন্টারনেটে সার্চ করেন। যদি পণ্য পছন্দ হয় তাহলে ক্রয় করেন।
তাছাড়া, অধিকাংশ ক্রেতা ৫ মিনিটের মধ্যে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সাথে লাইভ চ্যাট করতে শুরু করে দেয়।
আশাকরি, ডিজিটাল মার্কেটিং এর গুরুত্ব সম্পর্কে সহজে বুঝতে পারছেন। বর্তমানে ডিজিটাল মার্কেটিং ছাড়া কোনো ব্যবসা কল্পনা করা যায় না।
শেষ কথা
আজকে আমরা জানলাম মোবাইল দিয়ে ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব কিনা। আর যদিও মোবাইলের দ্বারা ডিজিটাল মার্কেটিং করা সম্ভব তাহলে কোন কোন কাজ করা সম্ভব।
মনে রাখবেন, আপনি যদি প্রোফাশনাল ভাবে ডিজিটাল মার্কেটিং শিখে টাকা আয় করতে চান তাহলে কম্পিউটার বা ল্যাটপট অবশ্যই প্রয়োজন।
অনেক ধন্যবাদ সুন্দর পোস্ট প্রকাশ করার জন্য
Thanks