মোবাইল ব্যাংকিং কি? মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও অসুবিধা

বর্তমান সময় হিসাবে আমরা প্রায় সবাই জানি মোবাইল ব্যাংকিং কি? সেই সম্পর্কে। তবে, Mobile Banking এর ফলে আমাদের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি সেটা হয়তো অনেকে জানেন না। 

এখান থেকে কিছু বছর আগে ব্যাংক এর যেকোনো সেবা নেওয়ার জন্য আমাদের সরাসরি ব্যাংকে যেতে হতো। কিন্ত বর্তমান টেকনোলোজি ও অনলাইনের মাধ্যমে এর জনপ্রিয়তা বৃদ্বি পাওয়ার সাথে সাথে ব্যাংকিং সেক্টর এর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা প্রচুর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কারণ, বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং (Mobile Banking) এবং ইন্টারনেট ব্যাংকিং (Internet Banking) এর সুবিধার ফলে আমরা সবাই ঘরে বসে বিভিন্ন ব্যাংকের সার্ভিস গুলো ব্যবহার করতে পারি। এই সব কিছুই উন্নত হয়েছে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তি এর মাধ্যমে।

মনে রাখবেন, mobile banking এবং Internet banking এই দুইটা অনেক নিরাপদ এবং এদের মাধ্যমে অনেক সহজে ব্যাংকিং সেবা গুলো পাওয়া যায় বা ব্যবহার করা যায়। 

আপনাকে বার বার কষ্ট করে bank এ গিয়ে সময় নষ্ট করতে হবে না। কারণ, এই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করে আপনি যেকোনো ধরনের লেন-দেন (transaction) যেকোনো জায়গা থেকে নিজের মোবাইলের মাধ্যমে করতে পারবেন।

এর মাধ্যমে আপনি Balance enquiry, fund transfer, bill payment, online payment ইত্যাদি সকল কাজ গুলো করতে পারবেন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে।

যার কারণে, বর্তমানে আধুনিক মানুষরা online banking technology কে নিজেদের জীবন ধারার সাথে এটাকে ভাগ করে নিয়েছে। এখন আপনি যদি মোবাইল ব্যাংকিং কি বা মোবাইল ব্যাংকিং কাকে বলে এই সম্পর্কে জানতে চান তাহালে সম্পর্ন আর্টিকেলটি মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।

মোবাইল ব্যাংকিং কি? (What is mobile banking)

সহজ ভাবে বলতে গেলে মোবাইল এর মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা ব্যবহার করার প্রক্রিয়াকে বলা হয় mobile banking. ব্যাংক একাউন্ট এর ব্যালেন্স চেক করা, টাকা ট্রান্সফার করা, বিল পেমেন্ট করা ইত্যাদি কাজ গুলো মোবাইলের মাধ্যমে করা সম্বভ।

আবার, Mobile banking মানে হলো একটি মোবাইল ডিভাইস এর মাধ্যমে করা প্রতিটা আর্থিক লেনদেন গুলোর সাথে জড়িত কার্যকলাপ গুলো, যেমন- যেকোনো একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা mobile banking service তাদের গ্রাহকদের প্রদান করে।

এই সেবার মাধ্যমে গ্রাহকগণ তাদের সঠিক User ID এবং Password ব্যবহার করে নিজের স্মার্টফোন থেকে প্রায় সকল ধরনের লেনদেন গুলো যেকোনো জায়গায় বসে করতে পারে।

এর মাধ্যমে যেকোনো ব্যাক্তি নিজের ঘরে বসে যেকোনো ব্যাক্তির bank account এ নিজের একাউন্ট থেকে টাকা ট্রান্সফার করতে পারে। এই সম্পর্ন লাভ কেবল আপনি স্মার্টফোন থেকে নিতে পারবেন। আশাকরি, মোবাইল ব্যাংকিং কাকে এই বিয়ষে বুঝতে পারছেন।

Mobile banking apps কি?

একটি mobile banking app যেকোনো অন্য একটি সাধারন মোবাইল অ্যাপের মতো। যেটাকে আপনারা নিজের ব্যাংক এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট বা google Play store থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন।

নিজের মোবাইলে ব্যাংক এর সাথে জড়িত সেবা গুলো ব্যবহার করার জন্য এই প্লাটফার্মটি ব্যবহার করা হয়। এটা সরাসরি ব্যাংক সার্ভার এর সাথে সংযুক্ত হয়ে থাকে এবং সেই ব্যাংকিং প্লাটফার্ম তৈরি করার ক্ষেত্রে এই অ্যাপ্লিকেশনটি।

ব্যাংক এর সার্ভারের সাথে কানেক্ট করা এই ধরনের অফিসিয়াল অ্যাপ গুলোকে বলা হয় mobile banking apps. এই অ্যাপে নিজের সঠিক ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে অ্যাপের মাধ্যমে সরাসরি নিজের ব্যাংকের সাথে সংযোগ করতে পারবেন।

যার ফলে আপনি ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংকিং লেনদেন গুলো সহজে করতে পারবেন। তবে, আপনার যে ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে সেই ব্যাংকের অ্যাপ ব্যবহার করতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা ও লাভ

  • Mobile banking মূলত ব্যবহার করা হয় ইন্টারনেট এর মাধ্যমে। কিন্ত গ্রামে যেহেতু ইন্টারনেটের সুবিধা নেই তাই সেখানে SMS এবং Phone Call এর মাধ্যমে এই সেবার লাভ নেওয়া সম্ভব।
  • আপনি ঘরে বসে বা যেকোনো জায়গা থেকে মোবাইলের মাধ্যমে ২৪ ঘন্টা banking সেবা গ্রাহন করতে পারবেন।
  • Mobile banking কে Internet banking এর তুলনায় অধিক সহজ এবং সুরক্ষিত বলে মনে করা হয়।
  • User ID, Password, translation code ইত্যাদি ছাড়া কেউ banking app ব্যবহার করতে পারবে না। এজন্য আপনার কাছে অ্যাপের সকল তথ্য থাকতে হবে।
  • আপনি যেকোনো সময় এই অ্যাপের মাধ্যমে রিচার্জ, বিল পেমেন্ট, অনলাইন পেমেন্ট, টাকা ট্রান্সফার ইত্যাদি কাজ গুলো করতে পারবেন। এর  জরুলি কাজ গুলোর করার জন্য আপনাকে bank  কে যেতে হবে না।
  • যেকোনো সময় নিজের মোবাইলে ব্যাংক একাউন্ট ব্যালেন্স (bank account balance check) করতে পারবেন।
  • মোবাইল ব্যাংকি এক্টিভ করে সেবা গুলো যেকেউ সকল প্রক্রিয়া গুলো অনেক সহজে করতে পারবেন।
  • বর্তমানে প্রায় সকল ব্যাংক গুলো তাদের গ্রাহকগণদের mobile banking এর সুবিধা দিচ্ছে। এর জন্য bank এর অফিসিয়ালি মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাপ মোবাইলে ডাউনলোড করে এই সেবা গ্রহন করতে পারবেন।
  • কিছু কিছু ব্যাংক এই সেবার বিপরীতে সামান্য চার্জ নিয়ে থাকে। আবার অনেক ব্যাংক সম্পর্ন ফ্রিতে এই সেবা গুলো প্রদান করে।
  • Mobile banking এর মাধ্যমে bank এর সাথে জড়িত অন্যান্য সেবা গুলোর জন্য আপনি ঘরে বসে সরাসরি আবেদন করতে পারবেন। যেমন- Home loan, personal loan, RD, fixed deposit ইত্যাদি।
  • অনেক ব্যাংক এর মোবাইল ব্যাংকিং সেবার দ্বারা আপনি আপনার bank statement গুলো নিজের মোবাইলে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন।

মোবাইল ব্যাংকিং এর অসুবিধা গুলো কি কি?

আমরা সবাই জানি যে জিনিসের যত বেশি সুবিধা রয়েছে সে জিনিসের কিছুটা হলেও অসুবিধা অবশ্যই থাকবে। উপরে আমি মোবাইল ব্যাংকিং এর সুবিধা গুলো বলেছি। তাহালে চলুন নিচে থেকে এই ব্যাংকিং সেবার অসুবিধা গুলো জেনে আসি।

  • এই ব্যাংকিং সেবার দ্বারা আপনি যেকোনো জায়গা থেকে মোবাইলের মাধ্যমে পেমেন্ট করা, মানি ট্রান্সফার করা সম্ভব, যার ফলে আপনার খরচ বেড়ে যাওয়া সম্ভবনা অনেক বেশি থাকে।
  • Mobile banking এর প্রচুর সিকিরিটি একটি সার্ভিস। কিন্ত যদি কেউ আপনার ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ড জেনে ফেলে তাহালে আপনি মোবাইলের সামনে না থাকা অবস্থায় তাদের একাউন্ট টাকা ট্রান্সফার করে নিতে পারবে। এজন্য কাউকে পাসওয়ার্ড বলবেন না।
  • আপনাকে অনেক সময় হ্যাকার দ্বারা smishing করা হয় যার মাধ্যমে ফেক এসএমএস (fake SMS) পাঠানো হয়। এবং আপনার কাছ থেকে টাকা আদায় করার চেষ্টা করা হয়। তাই আপনি এই বিষয়ের দিক থেকে সতর্ক থাকবেন।
  • আপনার কাছে যদি স্মার্টফোন না থাকে, তবে আপনি সাধারন মোবাইল দিয়ে সীমিত সেবার সুবিধা নিতে পারবেন।
  • Mobile banking সেবা দেওয়ার জন্য অনেক ব্যাংক আপনার কাছ থেকে সীমিত পরিমানে চার্জ নিতে পারে।
  • আপনার মোবাইল ফোন যদি কখনো চুরি হয়ে যায় তাহালে banking details এর অবস্তা অনেক খারাপ হতে পারে।

মোবাইল ব্যাংকিং দ্বারা কি কি করা যাবে?

  • টাকা লেনদেন করা।
  • Transaction history check করা।
  • Online ticket booking.
  • লোন এর জন্য আবেদন করা।
  • ইলেক্টনিক বিল সহ অন্য বিল পেমেন্ট করা।
  • বিভিন্ন ধরনের অনলাইনে পেমেন্ট করা।
  • Bank statement check করা।
  • একাউন্ট ব্যালেন্স চেক করা।
  • RD, fixed deposited, mutual fund ইত্যাদিতে ইনভেস্ট করা।
  • মোবাইল এবং DTH রিচার্জ করা।
  • RTGS, NEFT, IMPS ইত্যাদি।

কিভাবে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করবেন?

Mobile banking চালু করার জন্য এক এক ব্যাংকের ক্ষেত্রে চালু করার প্রক্রিয়া এক এক রকমের। তবে, এজন্য আপনি নিজের ব্যাংকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে বা branch এ গিয়ে চালু করার প্রক্রিয়া জেনে আসতে পারেন।

  1. তবে, বেশি ভাগ ব্যাংক এর official mobile banking app download করার পরে সরাসরি রেজিস্টার করার অপশন দেওয়া থাকে।
  2. একাউন্ট তৈরি করার সময় আপনার ATM Card password, bank এর সাথে যুক্ত করা মোবাইল নম্বার এবং কার্ড এর ডিটেলস (details) দেওয়া লাগতে পারে একাউন্ট ভেরিফিকোশন করার ক্ষেত্রে।
  3. তাছাড়া অনেক ব্যাংক এর ক্ষেত্রে আপনাকে bank ATM সেবার দ্বারা mobile banking activate করতে হয়।

এই সম্পর্কে বিস্তরিত ভাবে জানার জন্য নিজের ব্যাংকে গিয়ে দেখে নিবেন কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকি চালু করতে হবে।

মোবাইল ব্যাংকিং বাংলাদেশ

বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে অনেক গুলো ব্যাংকিং সংস্থা mobile banking এর সার্ভিস প্রদান করছে। আমি নিচে তাদের নাম উল্লেখ করেছি।

  1. বিকাশঃ ২০১১ সালে জুলাই মাসে ব্রাক ব্যাংক লিমিটেড এর পক্ষ থেকে বিকাশ এর যাত্রা শুরু হয়।
  2. রকেটঃ ২০১১ সালেন মে মাসে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেড এর পক্ষ থেকে রকেট এর যাত্রা আরম্ব হয়।
  3. নগদঃ ২০১৮ সালের ১১ নভেম্বর বাংলাদেশ ডাক বিভাগ এর পক্ষ থেকে নগদ যাত্রা আরম্ভ করে। বর্তমানে এটার জনপ্রিয়তা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।
  4. ইউ ক্যাশঃ ২০১৩ সালে নভেম্বর মাসে ইউসিবি (UCB) ব্যাংক এর পক্ষ থেকে এর কার্যক্রম আরম্ব হয়।
  5. মাই ক্যাশঃ ২০১২ সালের ফ্রেবুয়ারী মাসে মার্কেন্টাইল ব্যাংক লিমিটেড Mycash চালু করেন।
  6. এম ক্যাশঃ ২০১৯ সালে ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড এই সার্ভিস চালু করেন।
  7. টি ক্যাশঃ ২০১৮ সালে ট্র্যাশ ব্যাংক লিমিটেড এর তরফ থেকে এই সার্ভিস চালু করা হয়।
  8. সিউর ক্যাশঃ রুপালি ব্যাংক এর পক্ষ থেকে ২০১৮ সালে এই সার্ভিস চালু করা হয়।
  9. ওকেঃ ২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে ওয়ান ব্যাংক লিমিটেড এই সার্ভিস চালৃ করেন।

আজকে আমরা কি শিখলাম

তাহালে বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম মোবাইল ব্যাংকিং কি (What is mobile banking) সেই সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো। আমার লেখা আর্টিকেল যদি আপনার কাছে ভালো লাগে তাহালে নিচে কমেন্ট জানাবেন।

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap