স্টক মালের ব্যবসা করার সেরা ১০+ আইডিয়া (Stok Business Ideas in bangla)

আজকের আর্টিকেলে আপনাদের সাথে এমন কিছু স্টক মালের ব্যবসা (Stok Business Ideas in bangla) নিয়ে আলোচনা করবো যে ব্যবসা করে আপনি খুব সহজে লাভবান হতে পারবেন।

তবে, একটি কথা আমাদের সবাই মেনে নিতে হবে প্রক্যেকটি ব্যবসাতে লাভ, ক্ষতি অবশ্যই থাকে। ব্যবসা একটি স্বাধীন পেশা এবং এখানে লাভ, ক্ষতির ব্যাপারটা নিজের উপর নির্ভর করে।

ব্যবসায় লাভের ভাগিদার আপনি আবার ক্ষতির ভাগিদার ও আপনি। যেহেতু আপনার ব্যবসা আপনাকে দ্বায়িত্ব নিতে হবে।

আপনাকে আপনাকের সাথে যে স্টক মালের ব্যবসা ব্যবসা গুলো নিয়ে আলোচনা করবো যেখানে লাভ-ক্ষতির সম্ভবনা রয়েছে।

তবে, লাভের সম্ভবনা অনেক বেশি। আর যদি লাভ করতে পারেন তাহলে আপনি বাদশা।

এই ব্যবসা গুলো সবার পক্ষে করা সম্ভব। আর খুব সাধারণ বুদ্ধি লাগিয়ে এই ব্যবসা থেকে ভালো পরিমানে আমদানি করা যায়।

তাই, আজকের আর্টিকেলের বিষয় হলো স্টক মালের ব্যবসা করার সেরা ১০+ আইডিয়া। যে ব্যবসা গুলো আপনারা সহজে আরম্ভ করতে পারবেন।

সেরা ১০+ স্টক মালের ব্যবসা গুলোর আইডিয়া (Stok Business Ideas in bangla)

এই ব্যবসা করার শুরুতে কেউ প্রচুর মুনাফা আয় করতে না পারলেও লাভ করার রাস্তাটা অনেক সহজ।

(১) ধানের স্টক ব্যবসা

বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বের তৃতীয় স্থানে রয়েছে, প্রথমে আছে চীন এবং দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। বাংলাদেশ প্রধান শস্য হিসেবে ধানের চাহিদা ব্যাপকভাবে রয়েছে।

যেহেতু আমাদের দেশরর প্রধান খাদ্য হিসেবে দেশ বাসীর মধ্যে ধানের চাহিদা সারা বছর দেখা যায়। তাই, আপনি যদি ধানের সময়ে কম দামে ধান কিনে স্টক করে রাখতে পারেন।

পরে যখন ধানের সিজন চলে যাবে বা ধানের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে তখন আপনি ধান গুলো বিক্রি করে দিতে পারেন। এতে আপনি বেশ ভালো পরিমানে লাভ করতে পারবেন।

আপনি কম দামে ধান কেনার জন্য সরাসরি কৃষক ভাইদের সাথে কথা বলবেন। আর ধান গুলো সংরক্ষণের জন্য ভালো জায়গার ব্যবস্থা করবেন।

(২) গমের স্টক ব্যবসা

গম বাংলাদেশ অন্যতম একটি খাদ্য শস্য। সকালের নাস্তা থেকে শুর রু করে বিভিন্ন ধরনের খাবার তৈরি করার জন্য আটার প্রয়োজন হয়।

তাই সাধারণ লোকেদের কাছে সারা বছর গমের চাহিদা থাকে। এখন আপনার জন্য স্টক পণ্যের ব্যবসা হিসাবে গমের ব্যবসা লাভজনক হতে পারে।

আমাদের দেশে একবার মাত্র শীতের সময় গমের চাষ করা হয়। তাই আপনি যদি ঔ সময় বেশি পরিমানে গম কিনে সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন তাহলে, অফ-সিজনে বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

(৩) সিগারেটের / বিড়ির ব্যবসা

যদিও সিগারেট বা বিড়ি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কিন্ত পকেটের জন্য ক্ষতিকর নয়। এই ব্যবসা অল্প সময়ের জন্য। তাই অপ্ল সময়ের মধ্যে বেশি টাকা লাভের আশার এই স্টক মালের জুড়ি নেই।

সিগারেট বা বিড়ি স্টক করে রাখার সব থেকে ভালো সময় হলো আর্থিক বাজেট পেশ করার কিছু দিন আগে। কারণ, প্রত্যেক বছর বাজেটে দেখা যায় তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সিগারেটের বা বিড়ির ব্যবসা সব সময় করা যায় না। তাই আপনাকে টার্গেট রাখতে হবে, বাজেটের পরে যন বেশি দামে সিগারেট গুলো বিক্রি করা যায়।

(৪) আলুর স্টক ব্যবসা

আমাদের দেশে আলু একটি জনপ্রিয় সবজি। তাই সারা বছর আলুর চাহিদা দেখা যায়। যদিও আলু শীত কাছে ফসল হলেও বাজারে সব সময় যথাযথ চাহিদা থাকে।

তাই, আপনি আলুর সিজনে আলু কিনে গুদামজাত করে রাখতে পারেন। আর অফ-সিজেন গুলোতে বেশি মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

মনে রাখবেন, আলু দ্রুত সময়ের মধ্যে পচে যায় তাই, কোল্ড-স্টোরেজ, গুদামঘর বা সমপরিমান কোনো জায়গা থাকলে আলু কিনে স্টক করে রাখবেন।

(৫) পেঁয়াজের স্টক ব্যবসা

আলুর মতো সমান চাহিদা সস্পর্ন সবজি হলো পেঁয়াজ। যা আমাদের নিত্য দিন প্রয়োজন হয়। এই বছর করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের সময় আমরা পেঁয়াজ নিয়ে অনেক কালোবাজারির শিকার হয়েছিলাম।

অনেক অসাধু ব্যবসায়ী ঔ সময় সাধারণ মানুষের কাজে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করে প্রচুর টাকার মালিক হয়েছে। চিন্তা করে দেখুন ৫০-৬০ টাকা কেজি পেঁয়াজের মূল্য হয়েছিলো ২৫০-৩০০ টাকা।

আশাকরি, বুঝতে পারছেন স্টক মালের ব্যবসা গুলোর মধ্যে পেঁয়াজের ব্যবসার গুরুত্ব কতটুকু। যেহেতু পেঁয়াজ দ্রুত সময়ের মধ্যে পচে যায়। তাই, আপনাকে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য সঠিক ব্যবস্থা অবশ্যই দেখতে হবে।

পেঁয়াজ কেনার জন্য আপনি সরাসরি চাষী ভাইদের সাথে কথা বলতে পারেন। আবার ভারত থেকে ভুমরা সীমান্ত দিয়ে প্রত্যেক দিন প্রচুর পরিমানে পেঁয়াজ বাংলাদেশ আসে। চাইলে সেখান থেকেও কিনে স্টক করে রাখতে পারেন।

(৬) ডালের স্টক ব্যবসা

প্রত্যেক দিন সকালে বাঙালির অন্যতম প্রধান খাদ্য হলো ডাল-ভাত। তাছাড়া, ডালের মধ্যে রয়েছে প্রচুর উদ্ভিজ প্রোটিন।

লোকেরা প্রতিদিন মাছ, মাংস না খেতে পারলেও চেষ্টা করে দুমুঠো ডাল ভাত খাওয়ার। একারণে আমাদের দেশে ডালের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

৬০ টাকা কেজির ডাল বর্তমানে বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। তাই মজুদের ব্যবসা হিসেবে ডালের ব্যবসা অনেক লাভজনক।

আমাদের দেশে অনেক ধরনের ডালের চাষ করা হয়। যেমন- মুসুর, ছোলা, মটর, মুগ সহ আরো বিভিন্ন ধরনের ডাল।

এক্ষেত্রে ডালের ফসলের সিজনের সময় আপনি সরাসরি ডাল চাষীদের কাছ থেকে কম দামে কিনে স্টক করে রেখে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বেশি দামে বিক্রি করতে পারবেন।

(৭) সরিষার স্টক ব্যবসা

সরিষা আমাদের দেশে প্রচুর পরিমানে চাষ করা হয়। বিশেষ করে গরম এবং শীতের সময় এর চাষাবাদ বেশি লক্ষ করা যায়।

তাই, আপনি যদি কম দামে সরিষা সিজনের সময় সর্ষে ক্রয় করে রাখতে পারেন তাহলে, আফ-সিজনের সময় কম বেশি লাভে বিক্রি করতে সক্ষম হবেন।

তাছাড়া, সর্ষে ব্যবসা করার সুবিধা হলো অল্প যত্নে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। এতে সরিষা নষ্টের সম্ভাবনা খুব কম থাকে।

(৮) আদা ও মশলা স্টক ব্যবসা

বাঙালি রান্নার দিক থেকে আদা বা মশলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে মশলার চাষ কম হয় বলে আমাদের দেশ মশলার ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের উপর নির্ভরশীল।

তাই, স্টক পণ্যের ব্যবসা হিসেবে আদা, লবঙ্গ, দারুচিনি, এলাচ, জায়ফল, জয়িত্রী, জিরে ইত্যাদি বেশ লাভজনক পণ্য।

বর্তমান বাজারের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পাবেন এই সব মশলার দাম ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই এই সব মশলা গুলো কিনে স্টক করে রাখতে পারেন এবং দাম বৃদ্ধি পেলে বিক্রি করে দিতে পারবেন।

(৯) সুপারির স্টক ব্যবসা

আমরা বাঙালি, তাই সংস্কৃতি হিসেবে পান সুপারি খেতে অনেক আগে থেকে অভ্যাস। শশুর বাড়ি মিষ্টির সাথে পান-সুপারি বা মেহমান আসলে পান-সুপারি দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়।

আমাদের দেশের লোকেরা সারা বছর বিভিন্ন ধরনের সুপারি খেয়ে থাকেন। কেউ কাঁচা সুপারি খায়, কেউ শুকনা সুপারি খায়, কেউবা আবার মজানো সুপারি খায়।

তাই আপনি সুপারি চাষীদের কাছ থেকে কম দামে সুপারি কিনে স্টক করে রেখে বাজারের চাহিদা যখন বৃদ্ধি পায়, তখন বেশি দামে বিক্রি করে ভালো পরিমানে লাভবান হতে পারবেন।

(১০) বাদামের ব্যবসা

আপনি যদি স্টক পণ্যের ব্যবসা করতে চান তাহলে সবচেয়ে ভালো হবে বাদামের স্টক ব্যবসা। কারণ, বাদাম ভালো ভালো সংরক্ষণ করতে পারলে বছরের পর বছর গুদামজাত করা সম্ভব। 

আমাদের দেশের উত্তর বঙ্গে বেশি পরিমানে বাদাম চাষাবাদ করা হয়। তাই, চাষী ভাইদের কাছ থেকে সরাসরি বাদাম কিনতে পারলে কম দামে কিনতে পারবেন এবং সেটা সংরক্ষণ করে বাজারে ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।

আর বাদাম সব থেকে বেশি পরিমানে বিক্রি হয় শীতের সময়। তাছাড়া, বাদামের ব্যবসা খুব কমই লোকেরা করে থাকে। তাই বেশি লাভ করার সম্ভবনা থাকে।

(১১) পোষাকের স্টক ব্যবসা

পোষাকের ব্যবসা বলতে এখানে আমি শীতকালের  পোষাকের কথা বলবো। আপনি দেখতে পাবেন, শীতকালের শেষে আপনি মার্কেটে শীতের পোষাক গুলো অনেক কম দামে কিনতে পারবেন।

আবার দেখতে পাবেন, শীতের শুরুতে গরমের পোষাক বা জামা-কাপড় গুলো কম দামে পেয়ে যাবেন।

তাই, আপনি যদি কাপড়ের স্টক ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে শীকের শুরুতে গরমের কাপড় কিনবেন এবং গরমের শুরুতে শীতের কাপড় কিনে স্টক করে রাখবেন।

এক্ষেত্রে, শীতের সময় বেশি দামে শীতের পোষাক এবং গরমের সময় বেশি দামে গরমের পোষাক বিক্রি করতে পারবেন। এই এইক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জুতা ও মোজার স্টক বিজনেস করতে পারবেন।

স্টক মালের ব্যবসা সফল হওয়ার সহজ উপায়

আপনার কাছে যদি টাকা থাকে তাহলে আপনি ভিন্ন ভিন্ন পণ্য কিনে স্টক করে রাখতে পারেন। এতে আপনাকে একটি পণ্যের উপর নির্ভরশীল হতে হবে না।

আপনি যে পণ্য মজুদ করেন না কেন সব সময় চেষ্টা করবেন পচনশীল পণ্য এড়িয়ে চলার। কারণ, এই সব পচনশীল পণ্য সংরক্ষণ করতে ঝুঁকি থাকে।

আপনি যদি ঝুঁকি বাদে ব্যবসা করে লাভবান হতে চান, তাহলে আমি পরামর্শ দিবো নিজের কাছে থাকা সম্পর্ন টাকার পণ্য কিনবেন না।

আপনি সম্পর্ন টাকার পণ্য না কিনে সব গুলো পণ্য কিছু কিছু পরিমানে কিনেন। এতে একটি পণ্যতে লোকসান হলেও বাকি অন্যান্য পণ্য গুলোতে পুষিয়ে নেওয়া যাবে।

স্টক মালের ব্যবসা হালাল নাকি হারাম

আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল এবং সুদকে হারাম করেছেন। স্টক মালের ব্যবসা হালাল নাকি হারাম এই প্রশ্ন আনেকের মনে তৈরি হয়েছে। এর উত্তর হলো স্টক মালের ব্যবসা হালাল

তবে, বিশেষ ক্ষেত্রে এই ব্যবসা হারাম হয়ে যায়। যেমন, দুর্ভিক্ষের সময় বা মহামারীয় সময় অতিরিক্ত বেশি বেশি লাভের আশার যদি কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মজুদ করে রাখে সাধারণ মানুষের কষ্ট আর ভোগান্তিতে রাখে তখন এই ব্যবসা হারাম হবে।

শেষ কথা

আজকের আর্টিকেলে মূল বিষয় ছিলো স্টক মালের ব্যবসার সেরা ১০+ আইডিয়া সম্পর্কে। আপনি যদি নিচের প্রথম ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছেন, তাহলে আইডিয়াটি কাজে অনেক কাজে লাগবে।

মনে রাখবেন, অবৈধ ভাবে পণ্য মজুদ রেখে সংকট সৃষ্টি করা ইসলাম ধর্মে হারাম। তাই বেশি বেশি লাভের আশার পরকালে নিজেকে এবং দেশের মানুষকে বিপদে ফেলবেন না।

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap