বন্ধুরা অনেক কমেন্টে জানতে চেয়েছেন কম্পিউটার কি? বা কম্পিউটার কাকে বলে এবং কত প্রকার ও কি কি সেই ব্যাপরে। এর আগে আমি এই ব্লগে বলেছিলাম সুপার কম্পিউটার সম্পর্কে। এই আর্টিকেলে কম্পিউটার সম্পর্কে বিস্তরিত জেনে যাবেন।
আমরা যখন কম্পিউটার শব্দটি শুনি তখন ভাবি মনে হয় শুধু পার্সোনাল ডেস্কটপ কম্পিউটারের কথা। কিন্ত, মনে রাখতে হবে কম্পিউটারের মধ্যে অনেক প্রকারভেদ রয়েছে। মানে এক একটা আলদা কাজের জন্য এক এক ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়।
আপনারা হয়তো পার্সোনাল কম্পিউটার (personal computer) PC সম্পর্কে জানেন কিন্ত অন্যান্য যে Computer গুলো রয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে হয়তো জানেন না। নিচে আমি এই ব্যাপারে বিস্তরিত ভাবে আলোচনা করবো। চলুন তার আগে জেনে আসি কম্পিউটার কি বা কম্পিউটার কাকে বলে?
কম্পিউটার কি? বা কম্পিউটার কাকে বলে (What is computer)
কম্পিউটার হলো একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র। কম্পিউটার (computer) এর আভিধানিক শব্দ হলো হিসাবককারী যন্ত্র বা গণনাকারী যন্ত্র। Computare থেকে ইংরেজি Computer শব্দের উৎপত্তি হয়েছে।
আগেকার দিনে কম্পিউটার দিয়ে শুধুমাত্র হিসাবের কাজ করা হতো। কিন্ত বর্তমানের এই আধুনিক কম্পিউটার গুলো দিয়ে খুব দ্রুত গতিতে কঠিন হিসাব নিকাশের কাজ গুলো নির্ভুলভাবে করার পাশাপাশি বহু রকমের কাজ করা যায়।
একটি কম্পিউটার এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধে কোটি কোটি হিসাব নিকাশ করতে পারে। আর computer এর এই কাজ করার গতি হিসাব করা হয় ন্যানোসেকেন্ড (NS) এ। ন্যানোসেকেন্ড মানে হলো এক সেকেন্ডের একশত কোটি ভাগ সময়।
একটি কম্পিউটারের মধ্যে রয়েছে অনেক বর্তনী। এই বর্তনী বা ইলেকট্রানিক যন্ত্রের মাধ্যমে কম্পিউটার সকল ধরনের কার্যক্রম গুলো করে থাকে। আর এই ইলেকট্রানিক সংকেতের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে কম্পিউটার ল্যাংগুয়েজ।
কম্পিউটারের এই ল্যাংগুয়েজ ভাষার মাধ্যমে computer কে নির্দেশ করা হয় এবং সেই নির্দেশের উপর ভিত্তি করে কম্পিউটার ফলাফল প্রকাশ করে। আর কম্পিউটারের এই নির্দেশাবলীকে বলা হয় প্রোগ্রাম।
প্রোগ্রাম ছাড়া কম্পিউটার একটি জড় পদার্থ ছাড়া আর কিছু নয়। আর এই উপযুক্ত প্রোগ্রামারের ফলে কম্পিউটার জড় পদার্থ হতে গাণিতিক শক্তি সম্পন্ন বুদ্ধি মান যন্ত্রে পরিণত হতে পারে। আশাকরি, বুঝতে পারছেন কম্পিউটার (Computer) কি বা কম্পিউটার (Computer) কাকে বলে।
আধুনিক কম্পিউটারের জনক কে?
আধুনিক কম্পিউটারের জনক হলো বিজ্ঞানি চার্লস ব্যাবেজ। তিনি ছিলেন একজন ইংরেজি যন্ত্র প্রকৌশলী, গণিতবিদ, আবিস্কারক এবং দার্শনিক। চার্লস ব্যাবেজ জন্ম গ্রহণ করে ১৭৯১ সালে লন্ডনে।
১৮১০ সালে তিনি প্রথম যান্ত্রিক উপায়ে সংখ্যা গণনা করার যন্ত্র ব্যবহার করার কথা চিন্তা করেন। এর পরে তিনি ১৮৩০ সালে একটি যন্ত্র তৈরি করার পরিকল্পনা করেন, যেটা পাঞ্চড কার্ডের মাধ্যমে চালানো হবে। এটার মাধ্যমে একের পর এক কার্য সম্পাদন করতে পারবে।
এই তৈরি করা যন্ত্রকে আধুনিক কম্পিউটারের প্রথম সংস্কারণ হিসাবে ধরা হয়, যেটা অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন হিসাবে পরিচিতি লাভ করেন। কিন্ত দুঃখ জনক ব্যাপার হলো Charles Babbage অর্থের অভাবে পরিকল্পনাটি সম্পর্ন করতে পারেন নি।
এরপরেও তার তৈরি করা এই অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিন যান্ত্রিক ভাবে বিভিন্ন গাণিতিক সমসার সমাধার করতে পারতো। এই সকল দিক থেকে Charles Babbage কে বলা হয় কম্পিউটারের জনক (father of the computer).
কম্পিউটার এর সম্পর্ন নাম কী?
আপনি কি জানেন, কম্পিউটারের একটি ফুল নাম (full name) রয়েছে। সেটা হলো Commonly Operated Machine Particularly Use in Technical and Educational Research. আমি প্রথমে বলেছি Computer নামটি একটি ল্যাটিন শব্দ Compute থেকে নেওয়া হয়েছে। যার মানে গণনা যন্ত্র।
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম কি?
পৃথিবীর প্রথম কম্পিউটারের নাম হলো ENIAC (Electronic Numerical Integrator And Computer). এটাই প্রথম প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করার ডিজিটাল কম্পিউটার। এটার পরে থেকে কম্পিউটারের প্রজন্ম আরম্ব হয়।
কম্পিউটার কত সালে আবিষ্কার হয়
কম্পিউটার ১৮২২ সালে আবিষ্কার করা হয়। এর আগে ১৯ শতকে একজন প্রসিদ্ধ ম্যাথমেথিক প্রপেসর দ্বারা কম্পিউটার আবিষ্কার করা হয়।
এই ব্যাক্তির নাম ছিলো Charles Babbage. তাই এনাকে কম্পিউটারের জনক বা কম্পিউটারে পিতা বলা হয়।
তবে, কম্পিউটার কারো একার পক্ষে আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। এটা আবিষ্কার করতে দীর্ঘ সময় লেগেছিল।
আধুনিক কম্পিউটারের গঠন
যদি আধুনিক কম্পিউটারের প্রযুক্তির পথযাত্রা ১৯৫০ সাল থেকে শুরু হয়েছিলো, কিন্ত বর্তমানে যুগের সাথে তাল মিলিয়েকম্পিউটার এর ব্যাপক প্রসার ঘটেছে।
আধুনিক কম্পিউটার গুলো মূলত ৫ টি অংশ নিয়ে গঠিত হয়েছে। যথা-
- ইনপুট অংশ
- আউটপুট অংশ
- মেমোরি
- গাণিতিক যুক্তির অংশ
- নিয়ন্ত্রণ অংশ
১. ইনপুট অংশ
যেসকল ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারকে কোনো নির্দেশ প্রদান করে বা কোনো ডাটা, তথ্য প্রবেশ করানো হয় তাকে ইনপুট ডিভাইস বলা হয়। যেমন- কীবোর্ড, মাউস, ডিজিটাল ক্যামেরা, স্ক্যানার, মাইক্রোফোন, পেইড্রাইভ ইত্যাদি।
২. আউটপুট অংশ
যে সকল ডিভাইসের মাধ্যমে কম্পিউটারে তথ্যা বা ডাটা অথবা মিডিয়া যে ইউনিটের মাধ্যমে দিয়ে থাকে তাকে আউটপুট ডিভাইস বলে। যেমন- মনিটার, প্রিন্টার, হেডফোন, স্পিকার ডিক্স ইত্যাদি।
৩ মেমোরি
একটি কম্পিউটারের যে অংশে তথ্যা জমা থাকে তাকে বলা হয় মেমোরি। Computer তার কার্যকারী সময়ে প্রয়োজনীয় তথ্য মেমোরিতে জমা রাখে এবং প্রয়োজন মতো সেই তথ্য গুলো নিয়ে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ সহ যাবতীয় কাজ গুলো করে থাকে। মেমোরির সাথেও কম্পিউটারের অন্যান্য অংশ গুলো সংযুক্ত থাকে।
মেমোরি সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে, যথা-
- প্রাইমারি মেমোরি
- সেকেন্ডারি মেমোরি
৪. গাণিতিক যুক্তির অংশ
এই অংশে প্রক্রিয়ার জন্য গাণিতিক সমস্য সমাধান যুক্তি ও সিদ্ধান্তমূলক কাজ সংঘঠিত হয়ে থাকে। এই অংশে ডাটার উপর যাবতীয় গণনার কাজ যেমন- যোগ, বিয়োগ, গুন, ভাগ ইত্যাদি কাজ গুলো করার পাশাপাশি হ্যাঁ / না সম্পর্কিত কাজ গুলোও সম্পাদন করে থাকে।
৫. নিয়ন্ত্রণ অংশ
এই অংশের মাধ্যমে কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশের সাথে কান্ট্রোল বাসের মাধ্যমে সমন্বয় করে সকল ধরনের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই অংশটি মাইক্রোপ্রসেসরের অভ্যন্তরে থাকে।
কম্পিউটার কত প্রকার ও কী কী?
বর্তমানে বিশ্বে ব্যবহার করা কম্পিউটার গুলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে। কাজের ধরন ও ব্যবহারের প্রয়োগক্ষেত্র অনুসারে কম্পিউটার ব্যবহার প্রকারভেদ। গঠন এবং কাজের প্রকৃতি অনুসারে কম্পিউটারের প্রকারভেদ। ডিজিটাল কম্পিউটার আকার, আয়তন এবং কার্যকারীতা অনুসারে কম্পিউটারের প্রকারভেদ।
তবে, কাজের ধরন ও প্রকারভেদ অনুসারে কম্পিউটার দুই (২) প্রকার। যথা-
- ১. সাধারণ কাজে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটার
- ২. বিশেষ কাজে ব্যবহার করার জন্য কম্পিউটার
আবার গঠন ও কাজের প্রকৃতি বা প্রযুক্তি অনুসারে কম্পিউটার তিন (৩) প্রকার। যথা-
- ১. ডিজিটাল কম্পিউটার
- ২. অ্যানালগ কম্পিউটার
- ৩. হাইব্রিড কম্পিউটার
ডিজিটাল কম্পিউটার বা আকার, আয়তন এবং কার্যক্ষমতা অনুসারে কম্পিউটার চার (৪) প্রকার। যথা-
- মাইক্রো কম্পিউটার
- সুপার কম্পিউটার
- মিনি কম্পিউটার
- মেইনফ্রেম কম্পিউটার
মাইক্রো কম্পিউটারকে আবার পাঁচ (৫) প্রকার। যথা-
- ডেক্সটপ কম্পিউটার
- ল্যাপটপ কম্পিউটার
- নোটবুক কম্পিউটার
- পকেট কম্পিউটার
- পামটপ কম্পিউটার
কম্পিউটারের ব্যবহার বা প্রয়োগ সমূহ
বর্তমান এই আধুনিক যুগে চারিপাশে কম্পিউটার ব্যবহার করা প্রচুর পরিমানে। আপনার চারিদিকে নজর রাখুন কম্পিউটারে প্রয়োগ দেখতে পাবেন। এটার প্রধাণ কারণ জানেন? কারণ হলো, নির্ভুল কার্যক্ষমতা, দ্রুত গতি, মেমোরি ইত্যাদির কারণে অনেক কম সময়ে বেশি কাজ করতে পারে।
যার ফলে দিনের পর দিন কম্পিউটারের ব্যবহার বা প্রয়োগ ক্ষেত্র বৃদ্ধি পাচ্ছে। কম্পিউটারের উল্লোখ যোগ্য কিছু ব্যবহার নিচে উল্লোখ করছি –
- শিক্ষাক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- চিকিৎসা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- যোগাযোগব্যবস্থা কম্পিউটার ব্যবহার
- গবেষণায় কম্পিউটারের ব্যবহার
- কৃষিক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- ব্যাংকিং ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- প্রকাশনায় কম্পিউটারের ব্যবহার
- ব্যবসা বাণিজ্যে কম্পিউটার ব্যবহার
- ডিজাইন ও নকশার কাজে কম্পিউটার ব্যবহার
- বিনোদন ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহার
- ডাটা কমিউনিকেশনে কম্পিউটার ব্যবহার
- আফিস আদালতের কাজে কম্পিউটারের ব্যবহার
আধুনিক কম্পিউটারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?
১. দ্রুতগতি
Computer অনেক ফাস্ট এবং দ্রুতগতিতে কাজ করে। এই গতির কারণ হলো কম্পিউটার কাজ করে বৈদুৎতিক সিগন্যালের মাধ্যমে। যা চলাচল করে আলোর গতির বেগে।
২. মেমোরি
একটি কম্পিউটারের স্মৃতি শক্তি থাকে অনেক বিশাল। যা কোটি কোটি ডাটা, তথ্য সংগ্রহ করে নিজের কাছে জমা রাখে।
৩. বহুমুখীতা
বর্তমানের কম্পিউটার গুলো অনেক জটিল কাজ সম্পর্ন করার এক শক্তিশালি মাধ্যমে হিসাবে পরিনিত হয়েছে। সাধারণ হিসাব নিকাশ থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক সকল জটিল সমস্য গুলো সমাধান করা হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে।
৪. বিশ্বাসযোগ্য
Computer যেমন দ্রুত গতিতে কাজ করে ঠিক তেমনি নির্ভুল ভাবে কাজ সম্পর্ন করে। কম্পিউটার নির্ভুল ভাবে ১০০% কাজ করে সেটা আধুনিক কম্পিউটার প্রমান করেছে।
৫. ক্লান্তিহীনতা
কম্পিউটারের মাধ্যমে একটানা দীর্ঘক্ষণ কাজ করণেও ক্লান্ত হয় না এবং গণনাতে কোনো প্রকার ভুল করে না।
আজকে আমরা কি শিখলাম
তাহালে, বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম কম্পিউটার কি? বা কম্পিউটার কাকে বলে সেই সম্পর্কে। আমার লেখা What is computer আর্টিকেলটি কেমন লাগলো সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। এবং ভালো লাগলে সাথে শেয়ার করবেন।
কম্পিউটার সম্পর্কে আরো আর্টিকেল পড়ুন –
- ভালো কম্পিউটার চেনার উপায়
- কম্পিউটারের মূল অংশ কয়টি
- কম্পিউটার ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ
- কম্পিউটার সফটওয়্যার ডাউনলোড করার সেরা ওয়েবসাইট
- কম্পিউটার স্ক্রিনশট কিভাবে নিতে হয়
- ডিজিটাল কম্পিউটার কি
- সুপার কম্পিউটার কি
- কম্পিউটার কীবোর্ড শর্টকাট PDF
- কম্পিউটারে বাংলা টাইপিং শেখার সহজ উপায়
- কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়
- কম্পিউটার নেটওয়ার্ক কি
- হার্ডডিস্ক কি
wow really nice post
really nice post
thanks
wonderfull
Thanks