আউটসোর্সিং কি? আউটসোর্সিং কিভাবে শিখব

আউটসোর্সিং কি এই বিষয় নিয়ে আমাদের দেশে অনেক মানুষের মনে কৌতুহল রয়েছে। আমাদের মধ্যে অনেকে মনে করে অনলাইন ইনকাম করার জন্য আউটসোর্সিং শিখা প্রয়োজন।

আবার এমনও অনেক মানুষ রয়েছে যারা আউটসোর্সিং (outsourcing) মানে মনে করে ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করা। আবার কিছু কিছু মানুষ মনে করে নিজের মেইন কাজের বাহিরে অতিরিক্ত কিছু আয় করাকে আউটসোর্সিং বলে।

মানে তারা ধরে নেয় মেইন ইনকাম সোর্সের বাহিরে অতিরিক্ত কিছু ইনকাম করাকে আউটসোর্সিং হিসাবে ধরে। এর সাথে সাথে এমনও কিছু মানুষ আছে যারা আউটসোর্সিং বলতে ফ্রিল্যান্সিং করা বুঝে।

বলতে গেলে আমাদের দেশের মানুষরা আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং একসাথে মাখিয়ে গুলিয়ে ফেলছে।

আমি এমন অনেক জনপ্রিয় বাংলা ব্লগে দেখেছি যারা আউটসোর্সিং এবং ফ্রিল্যান্সিং এই দুইটা বিষয়ে ভালো ভাবে না বুঝে আউটসোর্সিং থেকে টাকা আয় করার উপায় লিখছে।

কিন্তু আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং আসলে সম্পর্ন ভিন্ন দুইটি বিষয়। মনে রাখবেন, আউটসোর্সিং মানে মেইন ইনকামের বাহিরে আর একটি ইনকাম করাকে বুঝায় না।

নিজের মেইন কাজের বাহিরে অনলাইন থেকে আয় করলে বা ফ্রিল্যান্সিং করে আয় করলে সেটাকে আউটসোর্সিং বলে না বা outsourcing হয় না।

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে জানবো, আউটসোর্সিং কি? আউটসোর্সিং এর ওয়েবসাইট কোন গুলো? আউটসোর্সিং কিভাবে শিখব? বা আউটসোর্সিং শেখার প্রয়োজন আছে কি না? আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে পার্থক্য কি, ইত্যাদি বিষয় গুলোর সম্পর্কে।

আউটসোর্সিং এর সম্পর্কে জানার আগে চলুন আমরা একটু পূর্বে যায়। আমাদের দেশের জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ বা ওয়েবসাইটে আউটসোর্সিং নিয়ে কি বলেছে বা কিভাবে আউটসোর্সিং এর সংজ্ঞা দিয়েছে। 

এখন আমি আপনাদের সামনে বাংলাদেশের জনপ্রিয় বাংলা ব্লগ “টেকনিউনস” এর সংজ্ঞা তুলে  ধরছি।

আউটসোর্সিং কি – টেকনিউনস এর সংজ্ঞা, “আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং হচ্ছে স্বাধীন বা মুক্ত পেশা। অর্থাৎ স্বাধীন বা মুক্ত ভাবে বা কোন প্রতিষ্ঠানের বা কোন কোম্পানির কাজের চাপ ছাড়া স্বাধীন ভাবে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের কাজ করে আয় করার নাম হচ্ছে আউটসোর্সিং।”

আমরা যদি উপরের সংজ্ঞাটি একটু ভালো ভাবে পড়ি তাহালে আমরা বুঝতে পারবো তারা আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং দুইটাকে একইভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

তার মানে হচ্ছে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা। টেকনিউনস এর সংজ্ঞা থেকে তারা বুঝায়ছে আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সি এর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই।

এখন আমরা দেখবো আউটসোর্সিং কি এবং ফ্রিল্যান্সিং কি এর দুইটার মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে কিনা? আমরা আরো দেখবো আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং দুইটা মুক্ত পেশা কি না? তাহালে চলুন নিচে থেকে জেনে আসি। 

আউটসোর্সিং কি? (What is outsourcing)

আউটসোর্সিং সম্পর্কে আমরা এতো সময় একটু কিছু জানতে পেরেছি। তাই সরাসরি আউটসোর্সিং এর সংজ্ঞা না দিয়ে একটি উদাহরণের মাধ্যমে আপনাদের আউটসোর্সিং সম্পর্কে পরিস্কার ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করছি।

আমি আশাকরি এই উদাহরণ পড়ার পরে আপনারা আউটসোর্সিং কি সেটা নিজেরা বুঝতে পারবেন।

উদাহরণঃ ধরুন আপনার একটি মুদির দোকান আছে। আপনার দোকানের সমস্ত মালামাল বিক্রি করার জন্য কয়েক জন কর্মচারী রয়েছে যাদের মাধ্যমে আপনি যাবতীয় কর্মকাণ্ড গুলো করিয়ে নিতে পারেন। 

এখন আপনার মুদির দোকানের সমস্ত মালামাল ক্রয় বিক্রয় করার জন্য অন্য কোনো লোক নিতে হচ্ছে না। এখন আপনি মুদি দোকানের জন্য যদি একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন হয়, তাহালে কি আপনার কর্মচারীদের দিয়ে সেটা করতে পারবেন না।

কারণ, যারা মুদি দোকানে কাজ করে তারা ওয়েবসাইট সম্পর্কে জানে না। তাই এর জন্য আপনাকে একজন ওয়েব ডেভেলপার এর সাথে কন্টাক করে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে নিতে হবে।

এখন আপনি দুইটি উপায় কন্টাক করে একজন ওয়েব ডেভেলপার এর কাজ থেকে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে পারবেন। একটি হলো অনলাইনে কোনো ফ্রিল্যান্সারের সাথে কন্টাক করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নেওয়া এবং অপরটি হলো সরাসরি কন্টাক করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নেওয়া।

এখানে আপনাকে অনলাইন বা অফলাইন যে কোনো একটি ক্ষেত্রে ওয়েব ডেভেলপারের সাথে কন্টাক করে কাজটি করিয়ে নিতে হবে।

এখানে আপনি একটি বিষয়ে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে, আপনি একজন ওয়েব ডেভেলপারকে দোকানে কর্মচারী হিসাবে নিয়েগ না দিয়ে তার সাথে কন্টাক এর মাধ্যমে কাজটি করে নিলেন।

সেহেতু এখানে আপনার খরচ বেঁচে যাচ্ছে। আর আপনি যদি একজন ডেভেলপারকে দোকানে নিয়োগ করে ওয়েবসাইট তৈরি করে নিতে গেলে তাকে মাসে অনেক টাকা বেতন দিতে হত।

অথচ আপনি যখন কন্টাক এর মাধ্যমে বাহিরের একজনের কাজ থেকে কাজটা করে নিলেন তখন কিন্ত আপনার অনেক খরচ কম হচ্ছে।

এবার মূল কথায় আসা যাক। এখানে একটি ওয়েবসাইট তৈরি করার জন্য দুইটি পক্ষ রয়েছে। একটি হলো আপনি এবং অপরটি হলো ওয়েব ডেভেলপার।

এখন আপনি ওয়েব ডেভেলপারকে দিয়ে আপনার দোকানে নিয়োগ না দিয়ে বাহিরের সোর্স থেকে ডেভেলপারকে দিয়ে যে কাজ করিয়ে নিলেন সেটা হলো আউটসোর্সিং এবং যে ব্যাক্তি অনলাইনের মাধ্যমে কাজটি করে দিয়েছেন তিনি হলো ফ্রিল্যান্সার।

সহজে বলতে গেলে, আপনি যে কাজটি আপনার দোকানের কর্মচারীদের দিয়ে না করিয়ে বাহিরের সোর্স থেকে কাজটি করিয়ে নেওয়ার কারণে আপনি আউটসোর্সিং করেছেন।

তাহালে এখানে আপনি হচ্ছেন একজন আউটসোর্সার এবং আপনি যাকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন তার ক্লায়েন্ট হিসাবে আপনি আউটসোর্সিং করেছেন।

পক্ষান্তরে আপনার কাজটি যে করে দিয়েছে সে হলো ফ্রিল্যান্সার। মানে যে আপনার কোম্পানির কাজ করে টাকা আয় করছে সে কখনো আউটসোর্সিং করছেন না। যে কাজটা করিয়ে নিবে সে আউটসোর্সিং করছে।

Outsourcing শব্দটি ইংরেজি outside resourcing থেকে আনা হয়েছে।

এখানে,

Out (বাহিরের) + Sourcing (উৎস) = Outsourcing (বাহিরের উৎস)।

সহজে ভাষায় আউটসোর্সিং কি?

এক কথায় আউটসোর্সিং বলতে নিজের সোর্সের বাহিরে অন্য কোনো সোর্স হতে কোনো ব্যাক্তির সাথে কন্টাক করে কোনো কাজ করে নেওয়াকে আউটসোর্সিং বলে।

আবার, অন্যভাবে বলা যায় কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজ অনলাইনের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে করিয়ে নেওয়াকে আউটসোর্সিং বলে। আর যারা এই আউটসোর্সিং এর কাজ করে তাদেরকে ফ্রিল্যান্সার বলে।

মনে রাখবেন, এই আউটসোর্সিং কাজ শুধু অনলাইন ফ্রিল্যান্সারদের মাধ্যমে করানো হয় সেটা কিন্ত নয়। অনলাইন ছাড়াও অফলাইনের মাধ্যমে কোনো ব্যাক্তিকে কোম্পানিতে নিয়োগ না দিয়ে কন্টাকের মাধ্যমে কোনো কাজ করিয়ে নেওয়াকে আউটসোর্সিং এর আওতায় পড়ে।

আউটসোর্সিং কেন করা হয়?

মনে করুন, আপনার একটি কোম্পানি আছে সেখানে ৩০ জন কর্মচারী কাজ করেন। এদের মধ্যে ১০ জনকে দিয়ে সফটওয়্যারের কাজ করান। আরো ১০ জনকে দিয়ে ভিডিও এডিটিং এর কাজ করান। আর বাকি ১০ জন কোম্পানি অন্যান্য কাজ গুলো দেখাশুনো করেন।

এবার দেখা গেলো আপনার কোম্পানির মাসে ৩/৪  লোগো ডিজাইন করার প্রয়োজন পড়ে। কিন্ত আপনার কোম্পানিতে যে কর্মচারীরা রয়েছে তাদের দিয়ে লোগো ডিজাইন করা সম্ভব না।

এক্ষেত্রে খুব কম সময়ের জন্য আপনার লোগো ডিজাইন করার প্রয়োজন হয় বলে আপনি কি কোম্পানিতে একজন লোগো ডিজাইনার নিয়োগ করবেন? আপনি যদি একজন লোগো ডিজাইনার কোম্পানিতে স্থায়ি ভাবে নিয়োগ দেন তাহালে প্রত্যেক মাসে অনেক টাকা বেতন দিতে হবে।

কোম্পানির খরচের কথা চিন্তা করে বাহিরের সোর্স থেকে একজন লোগো ডিজাইনার কে দিয়ে কাজ করিয়ে নিবেন। এতে কর্মচারীকে না রেখে বাহিরে হতে কাজ করানোর জন্য আপনার খরচ অনেক কম হচ্ছে।

মূলত কোনো কোম্পানির খরচ কমানোর জন্য এবং অল্প খরচে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং করা হয়।

আউটসোর্সিং এর সুবিধা গুলো কি? 

বলতে গেলে ছোট বড় সব কোম্পানি বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এর ক্ষেত্রে আউটসোর্সিং এর সুবিধা রয়েছে। একটি কোম্পানির এমন অনেক সেক্টর আছে যেখানে সব সময় কর্মচারীর প্রয়োজন হয় না।

ঔ সব সেক্টরে কাজ করানোর জন্য আউটসোর্সিং এর বিশেষ সুবিধা রয়েছে। তাহালে চলুন নিচে থেকে আউটসোর্সিং এর উল্লেখযোগ্য সুবিধা গুলো জেনে আসি।

ব্যায় অনেক কম

যেকোনো কোম্পানিতে একজন কর্মচারীকে ফুল টাইম না রেখে তার পরিবর্তে বাহিরের কোনো ব্যাক্তিকে দিয়ে কাজ করিয়ে নিলে অনেক কম টাকা ব্যায় হবে।

অনেক ছোট বড় কোম্পানি গুলো তাদের পছন্দ ও সুবিধা মতো সময়ে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করিয়ে নিচ্ছেন।

দক্ষ কাজের লোক

অনলাইনে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং ওয়েবসাইট গুলো থেকে দক্ষ লোক নির্ণয় করে কাজ করিয়ে নেওয়ার যায়। এই সব মার্কেটপ্লেস গুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের দক্ষ লোকরা যুক্ত থাকে।

কাজ দ্রুত করে নেওয়া যায়

আউটসোর্সিং এর কাজ চুক্তি ভিত্তিক হওয়ার কারণে যেকেনো কাজ অনেক দ্রুত সময়ে করে নেওয়া যায়। কারণ যে সকল ফ্রিল্যান্সাররা এই কাজ গুলো করে তারা দ্রুত কাজ শেষ কনে সাবমিট করার চেষ্টা করে।

অফ টাইমে কাজ করা যায়

অফিসের কর্মচারীরা নিদিষ্ট সময় ছাড়া কাজ কনে না। তাই অফিস বন্ধ থাকলেও আপনি আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে অফিসের কাজ কর্ম গুলো করে নিতে পারবেন।

আউটসোর্স কি কি কাজ করা যায়?

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন
  • ওয়েব ডেভেলপমেন্ট 
  • কাস্টমার সার্ভিস
  • কপিরাইটিং
  • ডিজাইন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং
  • মার্কেটিং ও সেলস
  • অ্যাকাউন্টিং এবং বুককিপিং
  • আরো অনেক কিছু

আউটসোর্সিং কিভাবে শিখব?

আপনারা হয়তো উপরের লেখা গুলো পড়ে পরিস্কার বুঝতে পারছেন আউটসোর্সিং করার জন্য শেখার কিছুই নেই।

কারণ, আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে টাকা ইনকাম হয় না, মূলত আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া হয়। তাই আউটসোর্সিং করার জন্য আপনাকে কোনো কিছু শিখতে হবে না।

তবে, আপনি যদি মনে করেন আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার হবেন তাহালে অবশ্যই অনেক কিছু শিখতে হবে।

কিভাবে আউটসোর্সিং থেকে আয় করবেন?

আমি আগেও বলেছি আউটসোর্সিং থেকে টাকা আয় করা বলতে কিছুই নেই। যে কোম্পানি গুলো আউটসোর্সিং করে তারা মূলত কম খরচে ফ্রিল্যান্সারদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য আউটসোর্সিং করেন।

আপনি যদি অনলাইন ইনকাম করে টাকা আয় করতে চান তাহালে অবশ্যই আপনাকে ফ্রিল্যান্সার হতে হবে। মনে রাখবেন, আউটসোর্সিং এর সাথে আয়ের সম্পর্ক নেই। তাই আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে টাকা আয় করার কোনো সুযোগ থাকছে না।

আউটসোর্সিং এর ওয়েবসাইট

বিভিন্ন কোম্পানি গুলো আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে তাদের কাজে ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নেওয়ার জন্য ইন্টারনেটে হাজার হাজার ওয়েবসাইট রয়েছে। এই  সব ওয়েবসাইট গুলো থেকে আপনারা বিভিন্ন দেশের দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে বের করতে পারবেন।

আমি নিচে এমন কয়েকটি ওয়েবসাইটের নাম বলছি, যেখান থেকে আপনি আউটসোর্সিং করার জন্য ভালো মানের ফ্রিল্যান্সার পেয়ে যাবেন।

আজকে আমরা কি জানলাম

তাহালে বন্ধুরা আজকে আমরা জানলাম আউটসোর্সিং কি? এবং আউটসোর্সিং কিভাবে শিখব এর সম্পর্কে। আশাকরি আজকে আপনারা outsourcing কি সেটার ব্যাপারে পরিস্কার বুঝতে পারছেন।

2 thoughts on “আউটসোর্সিং কি? আউটসোর্সিং কিভাবে শিখব”

Leave a Comment

Share via
Copy link
Powered by Social Snap